বোয়ালখালীতে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে কৃষি জমির মাটি কাটার প্রতিযোগিতা। উপজেলার সর্বত্রই প্রভাবশালীমহলের এ প্রতিযোগিতায় চাষাবাদ অযোগ্য হচ্ছে শত শত একর কৃষি জমি। হুমকির মুখে পড়া এসব জমি রক্ষায় প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী, পোপাদিয়া, কধুরখীল, সারোয়াতলী, আমুচিয়া, কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে স্ক্যাভেটর দিয়ে প্রভাবশালীমহলের ছত্রছায়ায় চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। দিনে রাতে সমান তালে চলছে এ কর্মযজ্ঞ।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এতে আরেকটিমহল এলাকাবাসীর অভিযোগকে পুঁজি করে মাটির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ও করছেন বলে জানা গেছে।
আরো দেখা গেছে, স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে কৃষি জমিকে ডোবায় পরিণত করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। ট্রাকে, পিকআপে করে এসব মাটি সরবরাহ করা হয় ইটভাটায়। এ ছাড়া ভরাটের কাজেও ব্যবহার হয় এসব মাটি। এতে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে দিনের পর দিন চাষের উপযোগিতা হারাচ্ছে চাষাবাদযোগ্য জমিগুলো। মাটি সরবরাহের ট্রাক-পিকআপ চলাচলে রাস্তাঘাট ধেবে গিয়ে বেহালদশার সৃষ্টি হচ্ছে। এনিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগেরও শেষ নেই।
পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাতগড়িয়াপাড়া এলাকায় চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু তাহের জয়নিউজকে বলেন, মাটির কাটার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন।
বোয়ালখালী পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি রাজু দে জয়নিউজকে বলেন, কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে চাষাবাদ। একজনের দেখাদেখিতে অন্যজন উৎসাহীত হচ্ছে মাটির বিক্রয়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে এ সংক্রমণ বন্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, যে হারে বছরের পর বছর কৃষি জমির উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে এতে কোনো একসময় চাষাবাদই বন্ধ হয়ে যাবে। একটি জমি এতো গভীর করে কাটা হয় যে, তাতে পার্শ্ববর্তী প্রায় জমিই চাষের উপযোগীতা হারাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের বোঝানো ছাড়া আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের সক্ষমতা নেই। এরপরেও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন জয়নিউজকে বলেন, অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নজরে না পড়তে মাটি কাটার নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা দিনের শেষ সময় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাটি কাটছে বলে জানতে পেরেছি।
এসব অসাধু মাটি ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।