দেশজুড়ে চলছে করোনার উত্তাপ। সেই উত্তাপ ছড়িয়েছে নগরের ফার্মেসিগুলোতেও। হঠাৎ এসব ফার্মেসি থেকে উধাও জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। এমনকি পাইকারি বাজার হাজারী লেইনেও নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল!
এদিকে ক্রেতাদের বারবার জিজ্ঞাসায় কয়েকটি দোকানতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। যেখানে লেখা- ‘মাস্ক, হেক্সিসল ও সেনিটাইজার নাই’।
এর আগে হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে হেক্সিসল পাওয়া গিয়েছিল। তখন ৭৫ টাকার ১০০ মিলির একটি হ্যান্ড স্যনিটাইজার ১০০ টাকা এবং ২৬০ টাকার ৪৫০ মিলি ৩১৫ টাকা বিক্রি করা হয়।
এদিকে হাজারীর লেইনের পাইকারি ওষুধের দোকান সুপা এন্ড সন্সে গিয়ে দেখা যায় সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা আছে- ‘মাস্ক, হেক্সিসল ও সেনিটাইজার নাই’।
এর কারণ জানতেই চাইলে দোকানি বলেন, ‘সাপ্লাই নেই। চাহিদাও হঠাৎ বেড়ে গেছে। তাই ক্রেতাদের দিতে পারছি না। যারা কিনতে আসছেন তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
নগরের ইপিজেডের একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন শাহাদাত হোসেন। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ইপিজেড এলাকায়।
শাহাদাত জয়নিউজকে বলেন, গত তিনদিন আমার এলাকার ফার্মেসি ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে পারিনি। আন্দরকিল্লায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। এই ফাঁকে একটু হাজারী লেইন এলাম। যেহেতু চট্টগ্রামে এটিই ওষুধের একমাত্র পাইকারি বাজার। কিন্তু এখানে এসেও আমি হতাশ।
তিনি বলেন, আমি বায়িং হাউজে চাকরি করি। আমার চার বছরের মেয়ে রয়েছে। চাকরিতে বেশিরভাগ সময় আমাকে বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি ঝুঁকি থেকেই যায়। ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে চেয়েছিলাম, পারিনি। বাধ্য হয়ে দুটো হ্যান্ড ওয়াশ কিনে নিলাম। সেখানেও দাম বাড়তি। ৪০ টাকার ছোট হ্যান্ড ওয়াশের প্যাকেট ৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
শাহাদাতের মতোই অবস্থা অন্য সবার। তারাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পেয়ে কেউ কিনছে হ্যান্ড ওয়াশ, আবার কেউ স্যাভলন।
বালুছরা এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দীন দিপু বলেন, আমার এলাকার একটা ফার্মেসিতেও মাস্ক, স্যানিটাইজার খুঁজে পাইনি। খোলা বাজারে যেসব মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে তা ব্যবহার করা-না করা এক। সরকারিভাবে প্রতিটি পরিবারকে একটি স্যানিটাইজার ও ৫টি মাস্ক দেওয়া উচিত। বেসরকারিভাবেও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা দরকার
বিক্রেতার বলছেন..
জীবাণুনাশক সামগ্রীর সংকটের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সব ফার্মেসি ব্যবসায়ীর বক্ত্ব্য ছিল অভিন্ন। তারা বলেন, করোনার কারণে এসব পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাড়তি এই চাহিদার যোগান দিতে পারছে না সরবরাহকারীরা। গত ১৫ দিন ধরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার-হেক্সিসলের সাপ্লাই নেই। সরবরাহকারীরা অর্ডার নেয় না। ফোন করলে পণ্য নেই বলে জানায়। পণ্য না পেলে বিক্রি করবো কীভাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন…
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান শাহরিয়ার কবির জয়নিউজকে বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ প্রচুর। এ অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে ম্যজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার আদেশ দিয়েছি। শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।
করোনায় আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নিজেকে পরিষ্কার রাখুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার-হেক্সিসল ব্যবহার না করলে করোনার জীবাণু যাবে না এমন কোনো কথা নেই। বাংলা সাবান দিয়ে হাত ধুলেও চলবে। সবার আগে চাই সচেতনতা।
চট্টগ্রাম ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক হোসাইন মো. ইমরান বলেন, বাজারে পণ্যের ঘাটতি রয়েছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৬০টি প্রতিষ্ঠানকে জীবাণুনাশক হেক্সিসল, স্যানিটাইজার বানানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রামের এলবিওন ল্যাব এবং পারমিট ল্যাব নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তিনি বলেন, বড় সমস্য হচ্ছে এসব জীবাণুনাশক মূল দুটি উপাদান অ্যালকোহল ও ক্লোরোহেক্সিটিন বাংলাদেশে তৈরি হয় না। এগুলো চীন থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে চীন থেকে শিপমেন্ট বন্ধ। এর প্রভাব পড়ছে খোলা বাজারে।
আগামী রোববারের মধ্যে বাজারে ১০ হাজার হেক্সিসল দেওয়া হবে। এর আগেও ২০ হাজার হেক্সিসল ছাড়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এতো হেক্সিসল দেওয়ার পরও সংকট কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সম্যস্যা করে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবগুলো। অনেক সময় দেখা যায় চাহিদা ৫ হাজার থাকলেও একাই ১০ হাজার পিস স্টক করে রাখে। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। আবার ওষুধ কোম্পানিগুলোও পাইকারি কিংবা খুচরা ব্যবসায়ীদের দিতে অনেক সময় গড়িমসি করে। কারণ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবগুলোর সঙ্গে তাদের চুক্তি ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকে। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এ সমস্যা নিরসনে ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা বোধসম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জয়নিউজ/কামরুল