প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ হাজার ৬১৬ জন। এতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড় তিন লাখ। ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৯৮ হাজার ৮৮৪ জন।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। ইতোমধ্যে ৩৫টি দেশ লকডাউন করা হয়েছে। আর মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে ইতালি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে করোনার উৎপত্তি স্থল চীন। তবে ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় মৃতের সংখ্যা ২। গত বুধবার (১৮ মার্চ) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর দেয় জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ (আইইডিসিআর)। দেশের মাটিতে এটিই করোনায় প্রথম মৃত্যু।
এরপর শনিবার (২১ মার্চ) মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আরেকজনের মৃত্যুর খবর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তবে আরও কয়েকজনের মৃত্যুকে করোনা সংক্রমণজনিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগের এক বাসিন্দা। ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধ রোববার (২২ মার্চ) রাত পৌনে ৮টার দিকে মারা যান।
ঢাকা: টোলারবাগের করোনাভাইরাসে যে ব্যক্তি শনিবার (২১ মার্চ) রাতে মারা গেছেন, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল এই বৃদ্ধের। তিনি থাকতেন তাদের পাশের ভবনে। স্থানীয় একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
টোলারবাগ এলাকার ভবন মালিক সমিতির সভাপতি শুভাশিষ বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, ওই ব্যক্তি উত্তর টোলারবাগের বাসিন্দা এবং সেখানকার দারুল ইহসান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি বলেন, আগের দিন মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির প্রতিবেশী ছিলেন ওই বৃদ্ধ। তারা দুজনই একই মসজিদে নামাজ পড়তেন। দুজন খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
সিলেট: শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা ভাইরাস ‘সন্দেহে’ যুক্তরাজ্যফেরত এক নারী (৬১) মারা গেছেন। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আইসোলেশনে থাকা ওই নারী মৃত্যুবরণ করেন।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল গণমাধ্যমকে জানান, রোববার ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের লোক সিলেটে এসে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। তবে এর আগেই যুক্তরাজ্যফেরত ওই নারী মারা যান।
শামসুদ্দিন হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স আবদুল খালেক জানান, নগরের শামীমাবাদ এলাকার ওই নারী গত ৪ মার্চ লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। ১০ দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি।
গত ২০ মার্চ শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হন ওই নারী। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে আইসোলেশনে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা।
খুলনা: গত বৃহস্পতিবার দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সম্প্রতি ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন। এক রোগীর স্বজনেরা বলছেন, জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট শুনেই চিকিৎসকেরা ভয় পেয়ে রোগীর কাছে আসেননি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত ওই দুজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ ছিল। তাদের মধ্যে একজন ভারত থেকে এসেছেন। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের করোনা হয়েছিল কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে কোথাও করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এ কারণে চিকিৎসকেরাও আতঙ্কে।
কিশোরগঞ্জ: রোববার রাত ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইতালিফেরত এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২১ মার্চ) সকালে এ খবর জানান উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব বুলবুল আহমেদ।
আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে সন্দেহ স্থানীয়দের। সে জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে আইইডিসিআর।
এদিকে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ইতোমধ্যে মাদারীপুরের শিবচর ও গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরসহ মিরপুরের কয়েকটি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। জনসমাগম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক সমিতি।