কাজী আবুল মনসুর। চট্টগ্রামের মিডিয়াপাড়ায় আলোচিত নাম। জনকণ্ঠ, সমকাল, কালের কণ্ঠ, আলোকিত বাংলাদেশ হয়ে বর্তমানে প্রতিদিনের সংবাদের ডেপুটি এডিটর। দেড় যুগেরও বেশি সময় চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায়, বিশেষ করে ব্যুরো অফিসগুলোয় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করতে সম্প্রতি তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম রিপোটার্স ফোরাম (সিআরএফ)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবেরও সিনিয়র সহ-সভাপতি।
উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারের সন্তান আবুল মনসুর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় জাতীয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছাত্রলীগের হাটহাজারী থানার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৬ বছর। চাকসু নির্বাচনে আলাওল হলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ১৯৯৫ সালে পেশাজীবনে মোড় ঘুরিয়ে চলে আসেন সাংবাদিকতায়। একযুগেরও বেশি আগে তিনি জনকণ্ঠে রাজাকার রিজু, রাজাকার সাকা চৌধুরী, কোটি টাকার তেল চুরি, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস নিয়ে সাড়াজাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে দেশজুড়ে হৈচৈ ফেলে দেন।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা ‘দৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতা শুরু। ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ শুরু করেন স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠে। এরপর সমকাল ও কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রামে ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামে তাঁর এক সহকর্মী জানান, মনসুর ভাই রিপোর্টারদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে তাঁর রোষানলে পড়লে অফিসে এক ছাদের তলায় কাজ করা মুশকিল। মিডিয়াপাড়ায় প্রচার আছে, সমকালের মালিক ও হামীম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সখ্যতা রয়েছে। এই সুসম্পর্কের শুরু ২০০৫ সালে সমকালের যাত্রাপথে।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক হিসেবেও কাজী আবুল মনসুরের সুনাম আছে। এই ফিল্ডে রয়েছে তার একাধিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম। সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘সন্ত্রাসবাদ ও সিআইএ’ সাড়া জাগিয়েছে পাঠক মহলে। ‘কোকো ও সায়মনকে ১৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ফাঁসল চায়না হারবার’ শিরোনামে কাজী আবুল মনসুরের লিড নিউজে দেশজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নামে দুদক। ১৯৮৯ সালে জাপান সরকারের আমন্ত্রনে সাউথ-ওয়েস্ট এশিয়ান ইনভাইটেশন প্রোগ্রামে জাপান সফরের সময় এনএইচকে বেতারে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাক্ষাতকার দেন।
তাঁর এক সাবেক সহকর্মী জানান, মনসুর ভাই আসলেই একজন আবেগী মানুষ। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেসময় তাকে কিছুটা কষ্টের সময় অতিক্রম করতে হয়। আমরা তখন তার পক্ষে কাজ করেছি। তাকে দেখেছি, সাংবাদিকদের অধিকার আদায় এবং এই পেশার মর্যাদা রক্ষায় তিনি সব সময় মাঠে-ময়দানে সক্রিয়। তিনি আরো জানান, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার আগে তিনি অন্য কোন পদে নির্বাচন করেন নি। সরাসরি এত বড় পদে তিনিই প্রথম নির্বাচন করেন এবং সফল হন।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জার্মানভিত্তিক সংবাদসংস্থা ডয়েচে ভেলেতে ২০১৩ সালে তাঁর একটি সাহসী সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। যেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও জামায়াত-শিবিরের হামলার ভয়ে চট্টগ্রামের অনেক অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ করা দূরের কথা, জাতীয় দিবসই উদ্যাপন করাও সম্ভব হয়নি! ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সেই টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে আসছেন সাংবাদিকতা জীবনের গোড়ার দিক থেকে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন চট্টগ্রাম জেলার কিছু অঞ্চল কিভাবে দিনে দিনে হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবিরের অভয়ারণ্য।
সাংবাদিকতা জীবনে জাতীয় পত্রিকায় এমন অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তিনি করেছেন যা দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে। এমনই একটি সমকালে প্রকাশিত ‘শফি : বাংলাদেশের মাফিয়া ডন’। এতকিছুর পরও সাংবাদিক হিসেবে একটি দিকে নিজেকে আলাদা দাবি করতে পারেন কাজী আবুল মনসুর। কারণ তাঁর হাত দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করা অনেকেই যে আজ বিভিন্ন মিডিয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক’।