ভারতে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। কিন্তু এ অবস্থায় ভারতের চেন্নাই ও বেলোরে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশি অনেকেই। যারা পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সেখানে গিয়েছেন। এখন সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাংলাদেশিরা। অনেকের চিকিৎসা শেষ আবার অনেকের না। এদিকে লকডাউনের কারণে স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছে না। ক্যান্সার রোগীদের কেমো দেয়াও বন্ধ রয়েছে। মরণাপন্ন এসব রোগী শেষবারের মতো দেশে আসতে চাচ্ছেন।
অনেকের টাকা পয়সাও শেষ। ভাড়া বাসায় থাকছেন অনেকে। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটিও জানে না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে তাদের প্রতিটি দিনক্ষণ।
চেন্নাই ও বেলোরে আটকা পড়া বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল, শংকর নেত্রালাই, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও গ্লোবাল হাসপাতাল বাংলাদেশিদের কাছে খুব জনপ্রিয়। প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখেরও বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য যান। চেন্নাই ছাড়াও সবচেয়ে বেশি রোগী যায় ভেলোরে। এছাড়া নয়াদিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বাইও যান অনেকে। তবে কলকাতা যাওয়ার হার আগের চেয়ে কমেছে।
আটকাপড়া চট্টগ্রামের বাসিন্দা মেহের জাকিয়া অয়ন জয়নিউজকে বলেন, আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে এসেছিলাম। সঙ্গে আমার ছোট ছেলেও রয়েছে। গত ২৩ মার্চ চিকিৎসা শেষ হয়। ২৪ মার্চ ভোরে কলকাতা যাওয়ার জন্য টিকেটও করেছিলাম। কিন্তু লকডাউনের জন্য সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে।
অয়ন আরো বলেন, আমরা যা টাকা এনেছি তা শেষ। এ পর্যায়ে কতদিন এখানে থাকতে হবে জানি না। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা শুধু কলকাতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ১২ হাজার রুপি চাচ্ছে। যা আমাদের জন্য এখন সম্ভব না। এছাড়া কলকাতায় কোথায় থাকবো বা কবে দেশে যাবো সে বিষয়ে কিছু বলছে না তারা।
দেশে এখন নিতে না পারলেও চেন্নাইয়ে সবাইকে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান তিনি।
এদিকে দিনাজপুরের অধিবাসী ফারহানা বিলকিস কামাল তার মায়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাই গেছেন। সেখানকার নিউরোলজিস্ট বলেছেন, তার মায়ের মস্তিষ্কের পেছনের দিকের নার্ভ শুকিয়ে গেছে। উনি কখনও আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু সেখানে অচল মাকে নিয়ে আটকা ফারহানা অথৈ সাগরে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ ভোরে চেন্নাই থেকে আমাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ২৪ মার্চ রাতে নরেন্দ্র মোদির ভাষণের পর ভারত লকডাউন হয়ে যায়। অচল মাকে সামলানো ছাড়াও রান্না-বান্না করতে হয়। বাজারে যেতে হয়। কিন্তু এই অবস্থায় দেশেও ফিরতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, তিনি যেন আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।’
এছাড়া জান্নাতুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘আমিসহ আশপাশে অনেক বাংলাদেশি চেন্নাইয়ের অ্যাপোলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে চিকিৎসা নিতে পারছি না। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও আটকে আছি। বর্তমানে এখানে খাবার পানি পর্যন্ত পাচ্ছি না। বাকিটা বুঝতেই পারছেন। বাংলাদেশ থেকে টাকা আনতে পারছি না। কী করব এখন বুঝতেছি না।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতে লকডাউনের পর ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আটকা পড়াদের পাসপোর্ট ও ভিসার ছায়াকপি সংগ্রহ করেন। এ পর্যপন্ত প্রায় ৩৫০ পাসপোর্ট জমা পড়েছে। হাইকমিশন থেকে বলা হচ্ছে, জনপ্রতি ১২ হাজার রুপি প্রদান করলে তারা সবাইকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কলকাতা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন।
সাইফুল আলম নামে একজন বেলোর থেকে জয়নিউজকে বলেন, আমরা এতটাকা দিয়ে কলকাতা গিয়ে কি করবো। আমরা দেশে যেতে চাই। কারণ এখানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় প্রয়োজন। যদি দেশে নিতেই না পারে তবে এখানে আমাদের থাকা খাওয়ার বিষয়ে অন্তত একটু তদারকি করুক। কারণ অনেকের টাকা শেষ। বাড়ি থেকেও টাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।