মায়ের দেওয়া ১৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৭৫ সালে ডেকোরেটারের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ব্যবসার দীর্ঘ ৪৩ বছরে তিনি একে একে গড়েছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামে ডেকোরেটরের প্রয়োজন হলেই সর্বাগ্রে আসে তাঁর নাম। তিনি হাজী মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন।
দীর্ঘ সাড়ে তিন যুগে সাহাবউদ্দিন ব্যবসটাকে কোথায় নিয়ে গেছেন সেজন্য ছোট্ট একটা উদাহরণই যথেষ্ট। চট্টগ্রামে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এক দিনে ২০টি অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের সামর্থ্য রাখেন। প্রতিদিন শুধু তাঁর ডেকোরশনেই দেড় লাখ মানুষের খাবারের আয়োজন করা যায়!
১৯৭৫ সালে যখন ডেকোরেটার ব্যবসা শুরু করেন তখন সাহাবউদ্দিনের বয়স ২০। পারিবারিকভাবে তাঁর মামা ও খালু এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। বাবাও ব্যবসায়ী ছিলেন। এই সুবাদে তিনিও এলেন ব্যবসায়।
মামার বাড়ি থেকেই পড়ালেখা করতেন সাহাবউদ্দিন। মামার ডেকোরেটার ব্যবসা থাকায় এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাঁর। তবে বাবা রাজি ছিলেন না এ ব্যাপারে। বাবা বলতেন, ডেকোরেটার ব্যবসা কাপড়ের ব্যবসা। কাপড় নষ্ট হয়ে গেলে এ ব্যবসার সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যায়। তবে মায়ের অনুরোধ ফেলে দিতে পারেননি বাবা। সম্মতি দিলেন।
সম্মতি পেলেও ব্যবসা করার পুঁজি ছিল না সাহাবউদ্দিনের। পরে মায়ের দেওয়া ১৩ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করেন। স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ চট্টগ্রামে ডেকোরেটার ব্যবসায় প্রথম স্থানটি তাঁর দখলে।
তখনকার সময় ডেকোরেটার ব্যবসায়ে কাপড় হিসেবে ব্যবহার হতো শাড়ি-লুঙি। তিনি বেছে নিলেন মায়ের শাড়িগুলো।
ব্যবসায় সহযোগিতা পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের কাছ থেকে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ছড়িয়ে পড়ে নগর থেকে দূর পাহাড়েও।
তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মেয়ের বিয়ের। কাজটি করে তিনি দেশজুড়ে পরিচিতি পান। বেড়ে যায় কাজের পরিধি। শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকায় গিয়ে কাজ করে আসতে হয় তাঁর প্রতিষ্ঠানকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বড় ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে সাহাবউদ্দিনের।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি দুর্বলতা রয়েছে সাহাবউদ্দিনের। তাই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সবসময় দারুণ সহযোগিতা পেয়েছে তাঁর কাছ থেকে। অনেক সংগঠনের অনুষ্ঠানে তিনি ডেকোরেশন করেছেন বিনামূল্যে।
সাংস্কৃিতক কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা আয়োজন করে ‘সাহাবউদ্দিনের বলী খেলা’। ২০১০ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে এই বলী খেলার আয়োজন হয়ে আসছে নগরের সিআরবির শিরিষতলায়। যেখানে ৩৫ হাজার মানুষের আগমন হয়। এখন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিভিন্ন জেলার বলীরা ছুটে আসেন। এমনকি আসে সুদূর ফ্রান্সের যুবকরাও!
চট্টগ্রামে কুস্তি শেখার কোনো স্কুল না থাকায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিজেকেএস-এর অধীনে সাহাবউদ্দিন কুস্তি একাডেমি চালু করার অঙ্গীকার করেছেন। একাডেমি হলে নতুন কুস্তিগীররা কুস্তির বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পারবে। প্রতিবছর বলি খেলায় নতুন নতুন বলির আগমন হবে। আর একাডেমির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে সাহাবউদ্দিনের পক্ষ থেকে।
সাহাবউদ্দিন এ পর্যন্ত ১২ লাখ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশেষভাবে ১৯৯৭ সালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠানটির কথা বলা যায়। একসঙ্গে দেড় লাখ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল এখানে।
২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় মেজবান অনুষ্ঠানের কথাও বলা যায়। এই আয়োজনে ছিল প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ২০০৫ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটিও উল্লেখযোগ্য। প্রায় ২০ বছর ধরে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে আসছে সাহাবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠান।
সফল ব্যবসায়ী সাহাবউদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, ডেকোরেটার ব্যবসা এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। আমার সফলতায় অনেক তরুণ এ ব্যবসায়ী এগিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, হাজী মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম ডেকোরেটার মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
জয়নিউজ/রাজীব