করোনায় কাহিল বিশ্ব। বাংলাদেশেও ছোবল মেরেছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাস। ভয়াবহ এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে দেশ। সরকার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে- ঘরে থাকার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার।
সরকারের এ আহ্বানে সাড়া মিললেও নগরের বাজারগুলোতে এর প্রতিফলন নেই। সামাজিক দূরত্বতো দূরে থাকুক এখানে সবাই চলাচল করছে একজন-অন্যজনের গা ঘেঁষে! এ অবস্থায় বিকল্প বাজার গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করছে সচেতন মহল।
দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থায় লকডাউন, কারফিউর মতো কড়াকড়ি আরোপের পক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সরকারের এ সাফল্য মুখ থুবড়ে পড়ছে নগরের বাজারগুলোতে।
করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। কিন্তু নগরের কাঁচাবাজারগুলোতে কোনোভাবেই এ দূরত্ব রক্ষা করা যাচ্ছে না। রাজপথে চলাফেরা থেকে শুরু করে সব জায়গায় সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও এ একটি ক্ষেত্রে যেন অসহায়। সব শ্রেণির জনগণের মধ্যে সচেতনতা না আসাই এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
নগরের কাঁচাবাজারগুলোতে গেলে মনেই হবে না দেশ এখন করোনার মতো মরণঘাতি ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সরেজমিন রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখানে দিব্যি যাওয়া-আসা করছে সাধারণ মানুষ। কেউ বাজার করছে, আবার কেউ বাজার করার বাহানায় অহেতুক ঘোরাফেরা করছে। কয়েকজনকেতো দেখা গেল বাজারকে রাজপথ বানাতে। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে বাজারে।
সন্ধ্যার আগমুহূর্তে বাজারে ভিড় আরো বেড়ে যায়। সবার তাড়াহুড়ো দেখে মনে হবে যেন রোজার সময় ইফতারের আগমুহূর্তের চিত্র। ইফতারের আগমুহূর্তে যেমন কেনাকাটার একটা ব্যস্ততা দেখা যায় তেমনই ব্যস্ততা থাকে এখানে। দেশে যে মরণঘাতি একটা ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে তা যেন তারা বেমালুম ভুলে যান!
সচেতন মহল বলছে, বাঁচতে হলে খেতে হবে, খাবার কিনতে অবশ্যই বাজারে যেতে হবে। কিন্তু রেয়াজউদ্দিন বাজার হোক কিংবা বক্সিরহাট, নগরের প্রায় বাজারই সরু। সরু বাজারের কারণে একজনের সঙ্গে অন্যজনের ঘেঁষাঘেঁষি লেগেই থাকে। স্থান সংকটের কারণে এখানে দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প বাজার তৈরি করা না গেলে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জয়নিউজ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন বলেন, সরকার দক্ষ হাতে করোনা মোকাবেলা করছে। সরকারের সময়োপযোগী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বাজার করার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বিকল্প বাজার সৃষ্টি করতে হবে।
‘বিকল্প বাজার’ কেমন হতে পারে জানতে চাইলে দারুণ একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেন দূরদর্শী এই রাজনীতিবিদ। জয়নিউজ সম্পাদক বলেন, রেয়াজউদ্দিন বাজারের উল্টো দিকে নতুন রেল স্টেশনের পাশেই রয়েছে রেলওয়ের বিশাল খোলা জায়গা। রেয়াজউদ্দিন বাজারকে অস্থায়ী বাজার হিসেবে এখানে স্থানান্তর করা যায়। একইভাবে বক্সিরহাট কাঁচাবাজারটিও স্থানান্তর করা যায় লালদিঘী মাঠে। এমন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি বিক্রেতারাও সরাসরি এখানে এসে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবেন।
আবার চকবাজার কাঁচাবাজারটিও অস্থায়ীভাবে নেওয়া যায় প্যারেড মাঠে। বিশাল এই মাঠটিতে দূরত্ব বজায় রেখেই গড়ে তোলা যায় সুন্দর একটি বাজার। এভাবেই নগরের প্রতিটি বাজার অস্থায়ীভাবে আশপাশের খোলা মাঠে নেওয়া যায়- যোগ করেন অহীদ সিরাজ চৌধুরী।