আজ মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল)। আজ পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭ সনের প্রথম দিন। শুরু হলো একটি নতুন বছর। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করবে বাঙালি জাতি। প্রতিবছর ঘটা করে দিনটি উদযাপন করা হলেও এবার মহামারি করোনার কালো ছায়ায় বিলীন হয়ে গেছে এ বছরের উৎসব।
সংস্কৃতি দিয়েই তো বাঙালি কতকিছুর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করলো। জয়ী হলো। তবে এবার, শক্র অদৃশ্য হলেও তার পদচ্ছাপ, তার বিস্তার দৃশ্যমান সমগ্র বিশ্বজুড়ে। শত্রু সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে এবার বাঙালির ঢাল ঘরে থাকা। ক্ষণিকের এই নির্বাসন যদি নিজের এবং সকলের জন্য কল্যাণ কামনার হয় তবে এটাই এখন বাঙালি সংস্কৃতির বড় শক্তিতে রূপ নেবে।
এবার মিলিত হবার শক্তিতে নয়, গৃহে থেকে সবার কল্যাণ কামনার শক্তিতেই এবার পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ। এবারের নববর্ষ উদযাপনে তাই নেই চিরাচরিত অনেক উপাদান। নেই সূর্যের প্রথম কিরণের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতায়োজন, নেই ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলশোভাযাত্রা। নেই লাখ মানুষের কলকলোহল। সারাদেশেই এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্থগিত করা হয়েছে বর্ষবরণের সকল আয়োজন।
নাগরিক জীবনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরোধা সংগঠন ছায়ানট তাদের ঐতিহ্যবাহী রমনা বটমূলের প্রভাতি অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশাল জনসমাগম এড়ানোর জন্য অনুষ্ঠানগুলো স্থগিত করা হয়েছে। চলমান দুর্যোগের সময়ে রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে না বলে ১ এপ্রিল জানিয়েছিল ছায়ানট।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রমনার বটমূলে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে আসছে ছায়ানট। শুধু ১৯৭১ সালে এর ব্যতিক্রম হয়েছিল। তবে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছরও তারা এ আয়োজন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলা বর্ষবরণের আরেক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানকে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকো অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ অনুষ্ঠানও এবার বাতিল করা হয়েছে। তবে রীতি অনুসারে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা বর্ষবরণের পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। এটি ভার্চুয়ালি প্রকাশিত হয়েছে।
এ বছর ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি সব টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হবে বলে সোমবার জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা হতে প্রচার করা হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে বাংলা নববর্ষের দিনে বিনা কারণে বাড়ির বাইরে না গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঘরে থেকেই মৌসুমি ফল খেয়ে পহেলা বৈশাখের আনন্দ করতে জাতিকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্ষবরণের স্বাভাবিক আয়োজন এবার নেই। কিন্তু বাংলার হাজার বছরের বহমান লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাতে মলিন হবে না। এই পরিস্থিতিতেও জাগ্রত থাকবে বাঙালির শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহ্য। দুঃসময় কেটে গিয়ে আগামী দিনে বাংলা নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব হয়েই থাকবে। হঠাৎ আসা মহামারীর দাপটে বদলে গেছে চারপাশ। তবুও মানুষের অন্তনির্হিত শক্তি ঠিকই মানুষকে পৌঁছে দেবে তার আসল ঠিকানায়। নীরব উদযাপনের মধ্য দিয়েও নববর্ষে বাঙালির সাংস্কৃতিক সংগ্রাম আরও শক্তিশালী হবে। নতুন বছর সবার জন্য নিয়ে আসবে শুভ বার্তা।
স্বাগত ১৪২৭, শুভ নববর্ষ।