প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে নাকাল গোটা বিশ্ব। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও দুটি আন্তর্জাতিক অঞ্চলের ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৫ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। মারা গেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৩ জন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
এমন সময় মানুষের মনে নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। উৎসাহী মনে জানার আগ্রহ বাড়ে কোন ধরনের মানুষ করোনাভাইরাসে বেশি মারা যায়? যদিও এই ভাইরাসের প্রভাব একেক ধরনের ব্যক্তির উপর একেকরকম। তার ওপর নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু এখনো জানা যায়নি।
তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে পাঁচ ধরনের মানুষ করোনাভাইরাসে বেশি মারা যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
বয়স্ক ব্যক্তি
বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক মানুষেরা করোনাভাইরাসে বেশি মারা যায় (৪০-৯০+)। বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্ব মানুষেরা। করোনাভাইরাসের আতুরঘর উহানের দুটি হাসপাতালের ১৯১ জন রোগীর উপর চালানো সমীক্ষা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বয়স্ক মানুষের সঙ্গে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকির সম্পর্ক বেশি।
পুরুষ
গেল সপ্তাহে নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি মারা যাচ্ছে করোনাভাইরাসে। করোনাভাইরাসে মৃতুপুরীতে পরিণত হওয়া ইতালিতে পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার হার ৫৩ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ৬৮ শতাংশ! গ্রীসে পুরুষদের আক্রান্তের হার ৫৫ শতাংশ। আর মৃতের হার ৭২ শতাংশ। যদিও এখনো জানা যায়নি যে ঠিক কি কারণে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছে পুরুষরা মহামারিকে কম গুরুত্ব দেয় নারীদের চেয়ে।
যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ/নানা রোগে ভুগছেন
যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ তাদেরও করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়বেটিস, যকৃৎ-এর সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে ভুগছেন। ইংল্যান্ডের জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল অনুযায়ী, উহানের ১ হাজার ১ জন রোগীকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যাদের ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানান রোগে ভুগছে তাদের মারা যাওয়ার হার অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যেও একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে ডাক্তারদের।
যাদের ওজন বেশি
যাদের ওজন অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি তারাও করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। গেল মাসে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) অডিট অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত স্থুল ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয় অন্যদের তুলনায়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা ৬৩ শতাংশ রোগীই অতিরিক্ত ওজনের। অর্থাৎ স্থুলকায়।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
উপরোক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাও করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, খুসখুসে কাশি, ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ; এমন সমস্যাগুলোর কারণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই হবে।
জয়নিউজ/এসআই