যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর সঙ্গে নাশকতা সৃষ্টির বৈঠকে অংশ নেওয়া বহুল আলোচিত রকি বড়ুয়াকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১২ মে) ভোরে নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঁচ সহযোগী এবং বিদেশি পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে গিয়ে তার দুই পা ভেঙে গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অভিযুক্ত রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। জামায়াত নেতা সাঈদীকে মুক্ত করার জন্য ভারতের লবিং ঠিক করার দায়িত্ব রকি বড়ুয়া নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল জানান, রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কিছুদিন ধরেই আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। বিশেষ করে জামায়াত নেতার ছেলের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিলেন। এমনকি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হিসেবেও চিহ্নিত এই রকি বড়ুয়া।
র্যাব অধিনায়ক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ধরার জন্য র্যাবের একটি দল পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে রকি বড়ুয়া তিন তলা বাড়িটির ছাদ থেকে লাফ দেয়। ওই বাড়ি থেকে প্রথমে তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু রকি বড়ুয়াকে না পেয়ে র্যাব সদস্যরা হতাশ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাড়ির পাশের ড্রেনে রকি বড়ুয়াকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। মূলত ছাদ থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে ড্রেনে পড়ে তার দু’পা ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ওই বাসায় তল্লাশি করে পাওয়া যায় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পিস্তলের গুলি এবং বিদেশি মদ।
এছাড়া রকি বড়ুয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লালখান বাজার এলাকার অপর একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় রকি বড়ুয়ার এক বান্ধবীকে। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি মদ এবং তার প্রতারণার নানা ধরনের নথি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাপড়ও রয়েছে। নিজেকে ভিক্ষু হিসেবে পরিচয় দেওয়া রকি বড়ুয়ার বাসায় বান্ধবী এবং বিদেশি মদ পাওয়া নিয়ে এলাকায় ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
র্যাব-পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া এলাকায় নানা ভাবে প্রতারণা করে আসছিলো অভিযুক্ত রকি বড়ুয়া। বিশেষ করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তার তোলা ছবি দেখিয়ে তিনি নিজেকে ভারত সরকারের কাছের লোক হিসেবে জাহির করতেন। এলাকার লোকজন’ও তার ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকতো।
তবে সম্প্রতি জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এবং জামায়াত সমর্থিত তারেক মনোয়ারকে নিয়ে বৈঠক করে তার গ্রামের বাড়িতে। সাঈদীকে মুক্ত করার জন্য ভারত সরকারের সাথে লবিং করার পাশাপাশি দেশে অস্থিতিশীল সৃষ্টির জন্য ওই বৈঠকে পরিকল্পনা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৈঠকের পর পরই লোহাগাড়া এলাকায় একটি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
অঘোষিত লকডাউনের মাঝে জামায়াত নেতার ছেলের চট্টগ্রাম আসা এবং বৈঠকের আয়োজন নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি রকি বড়ুয়া নিজেও দাবি করে লবিং ঠিক করার জন্যই শামীম সাঈদী ও তারেক মনোয়ার তার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এরপর থেকে রকি বড়ুয়ার সন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।