করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে সাধারণ ছুটি। আর এই লকডাউনের ভেতেরেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতনের ঘটনা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও শালিস কেন্দ্র, ব্র্যাকের মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্মহীন হওয়া, সারাক্ষণ ঘরে বন্দি থাকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করোনা প্রতিরোধে বেশি নজর দেওয়া এবং পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে নারী নির্যাতন ও বাল্য বিয়ের মতো ঘটনা।
গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, কুমিল্লা জেলার হোমনায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক বিধবা নারীকে গণধর্ষণ এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলায় তালুক খুটামারা বটতলা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে বাড়িভাড়া দিতে না পারায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কুলতলী গ্রামে চার সন্তানের বিধবা মাকে গণধর্ষণ, বরগুনার তালতলী উপজেলায় সাত বছরের মেয়ে শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মাকে গণধর্ষণ এবং নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় বাল্য বিয়ের মতো ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ৯৯৯-এ পারিবারিক সহিংসতা বিষয় দুই হাজার ৪৩৮টি, নারী নির্যাতনের ১ হাজার ৬৩৫টি, বাল্য বিয়ে ১ হাজার ৫৮৪, উত্ত্যক্ত ৩৬২টি এবং শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে ৫৭টি কল আসে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—করোনাকালে নারীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হবে। এসময় ১১৪ দেশে ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী ঘরে থাকার কারণে পরিবারপরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে। ফলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ হবে ও অনিরাপদ গর্ভপাত বাড়বে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নারী ও মেয়ে শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রোগ্রামের সমন্বয়ক অর্পিতা দাস জানান, আগে যারা নির্যাতনের শিকার হতেন তারা এখন আরো বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন। যারা নির্যাতিত হতেন না তারাও এসময় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকের অভিযোগ ১০৯-এ ফোন করে কাজ হয়নি।