তিন সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জনসমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন বলে জরিপ চালিয়ে জানতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
জয়ের তথ্য মতে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাজশাহীতে, বরিশালেও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে, আর সিলেটে এগিয়ে থাকলেও বিএনপির তুলনায় পার্থক্য তুলনামূলক কম।
ভোটের আগের দিন রবিবার সকালে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই তথ্যটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র যাকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতা হিসেবে দেখে থাকেন কর্মী-সমর্থকরা।
জয় জানান, রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার আরডিএসকে দিয়ে এই জরিপ করিয়েছেন তারা।
আর এর ফলাফল হিসেবে বরিশালে নৌকা প্রতীকের সেরনিয়াবাত সাকিদ আবদুল্লাহর পক্ষে ৪৪ শতাংশ মানুষ সমর্থক জানিয়েছেন। সেখানে ধানের শীষে বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে বলেছেন ১৩.১ শতাংশ মানুষ। আর ০.৮ শতাংশ ভোটার অন্যদের কথা বলেছেন যেখানে ২৩ শতাংশ ভোটার কারও সিদ্ধান্ত নেননি এখনও। আর ১৫.৯ শতাংশ ভোটার তাদের মত জানাতে রাজি হননি।
এই মহানগরে মোট এক হাজার ২৪১ জন ভোটারের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ব্যবধান আরও বেশি। সেখানে নৌকা প্রতীকের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে বলেছেন ৫৮ শতাংশ ভোটার। বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে বলেছেন ১৬.৪ শতাংশ। আর অন্যান্য প্রার্থীর কথা বলেছেন ০.৯ শতাংশ। ১২.৩ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি আর ৯.৬ শতাংশ তাদের মতামত জানাতে রাজি হননি।
রাজশাহীতে জরিপটি চালানো হয়েছে মোট এক হাজার ২৯৪ জন ভোটারের মধ্যে।
তবে সিলেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে এই জরিপে, যদিও সেখানে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সেখানে বলেছেন ৩৩ শতাংশ ভোটার। আর ধানের শীষে আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে বলেছেন ২৮.১ শতাংশ। অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ১.৩ শতাংশ। আর সিদ্ধান্তহীনতায় ২৩ শতাংশ।
এই মহানগরে জরিপটি চালানো হয়েছে মোট এক হাজার ১৯৬ জন ভোটারের মধ্যে যাদের মধ্যে মতামত জানাতে রাজি হননি ১২.৬ শতাংশ।
জয় জানান, নির্বাচন কমিশনে ভোটার তালিকা ছাড়াও ২০১১ সালের আদমশুমারীতে উঠে আসা জনমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই তিন মহানগরে জরিপের নমুনা বাছাই করা হয়েছে। আর এই জরিপে বিচ্যুতি অর্থাৎ ফলাফল ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ধরা হয়েছে ২.৫ শতাংশ।
জয় লেখেন, তিনি গত পাঁচ বছর ধরেই ভোট নিয়ে আরডিসিকে দিয়ে জরিপ চালিয়ে আসছেন। তারা যে পদ্ধতিতে জরিপ চালায় এবং তার যে ফলাফল আসে, সেটি সঠিক বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে জরিপের ফলাফল আর ভোটের ফলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে, সেটিও স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র। তিনি লেখেন, গত মধ্যরাত পর্যযন্ত পুরোদমে যে প্রচার চলেছে তাতে শেষ পর্যযন্ত ভোটের হিসাবে কিছুটা প্রভাব পড়তেই পারে।
জয় লেখেন, ‘বরিশাল ও সিলেটে আওয়ামী লীগ বিপুল ব্যবধানে জিতবে বলে আমি আশাবাদী। সিলেটে আমরা কিছুটা এগিয়ে, সেখানে পার্থক্য এত কম যে ভবিষ্যতবাণী করার মতো সময় এখনও আসেনি।’
সোমবার যে তিন মহানগরে ভোট হতে যাচ্ছে, তার তিনটিতেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছিল বিএনপি।
অবশ্য ওই বছর আরও দুই মহানগর খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনেও জিতেছিল বিএনপি কিন্তু দুই মহানগরে এবার যথাক্রমে প্রায় ৬৮ হাজার ও দুই লাখ ভোটে হেরেছে তারা।
অবশ্য বিএনপি এই পরাজয়ের জন্য কারচুপি আর ভোটে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছে, যেটি নিয়েও কথা বলেন জয়। তিনি লেখেন, ‘বিএনপি সব ধরনের অভিযোগের কথা বলে যাচ্ছে, কিন্তু সত্য এটা যে তারা জনসমর্থন হারাচ্ছে।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, এই কয় বছরে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। আর এখন ভোটে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি আর কোনো হুমকি নয়।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসে জয় আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করতে বিএনপির ভোটকেন্দ্র গোলযোগ ও ব্যালটে সিল মারার বিষয়ে দলীয় নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটে গোলযোগ করার ‘চক্রান্ত নিয়ে’ বিএনপি নেতার ফাঁস হওয়া মোবাইল ফোনের কথোপকথনের কথাও তুলে ধরেন জয়। বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীরা বুঝে গেছে তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কারণে তারা এই নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগের বদনাম করার চেষ্টা করবে।’
বিপি