দেশের প্রেক্ষাপটে কোনো রাজনীতিবিদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে জনসম্পৃক্ত কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার নজির অনেক রয়েছে। তবে যার কাছে দল ও দেশ প্রাধান্য পায়, সে সবকিছুর উর্ধ্বে থেকে জনগণের জন্য কাজ করে যায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন তেমনই একজন মানুষ। যিনি চট্টগ্রামে করোনায় মোকাবিলায় শুরু থেকে মাঠে-ঘাটে ‘যুদ্ধ’ করে চলেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই নগরবাসীর পাশে আছেন তিনি।
করোনার শুরুর দিকে মেয়র বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ বেঁচে আছি, আমার প্রিয় চট্টগ্রাম নগরবাসীর নিরাপত্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।’ কথাটা এখন পর্যন্ত ঠিকই রেখেছেন তিনি।
গত মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ছাড়া নগরের অলিগলিতে আর কোনো জনপ্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। যখন এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনা শুরু হয়, তখনই কিছু জনপ্রতিনিধি কাজ শুরু করলেও পরে তাদেরকে আর পাওয়া যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত নগরবাসীর সেবা করে যাচ্ছেন কেবল আ জ ম নাছির উদ্দীন।
চসিক মেয়রের করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকে নগরবাসীর জন্য যেসব কাজ করেছেন, তার মধ্যে কিছু কর্মকাণ্ড হলো-
শহরজুড়ে জীবাণুনাশক ছিটানো
পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সেবকদের সাহস দিতে মেয়র নাছির নিজেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছেন। এছাড়া পরিচ্ছন্নকর্মীদের মাধ্যমে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়।
সাবান বিতরণ
করোনা প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেই পুরো চট্টগ্রামজুড়ে সাবান বিতরণ করেন মেয়র নাছির। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে জনগণকে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সাবান বিতরণ করেন।
মাইকিং করে সচেতনতা
চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিরা যখন চট্টগ্রাম থেকে দূরে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, তখন মেয়র নাছির নগরজুড়ে করেছেন মাইকিং। নিজে মাইকিং করার একটি কারণ ছিল, যেন মানুষ ঘরে থাকার জন্য সচেতন হয়। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি দিয়ে করা হয় প্রচার-প্রচারণা।
স্যানিটাইজার বিতরণ
৪১টি ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক স্প্রেকরণ এবং চুয়েট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রদের যৌথ উদ্যোগে তৈরিকৃত অটোমেটেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার উদ্বোধন ও স্থাপন।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ত্রাণ বিতরণ
করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। তারা কর্মহীন থাকায় পরিবার চালাতে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে মধ্যবিত্তরাও আছেন কষ্টে। তারা না পারছেন কাউকে বলতে, আবার না পারছেন না খেয়ে থাকতে। সব বিবেচনা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে চাল, ডাল, আলু, তেল ও লবণ পৌঁছে দিচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন তার ভালোবাসার উপহার।
সরকারি ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন
করোনা পরিস্থিতে দেশের সব বিষয় মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকারি ত্রাণ যেন সাধারণ মানুষরা পায়। এরই অংশ হিসেবে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সরকার থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ ওয়ার্ড-কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।
মেসেজ দিলেই খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে
শুধুমাত্র ফেসবুক পেইজে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারসহ মেসেজ করলে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নেন তিনি। মেয়রের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/gsajmnasiruddin) যাবতীয় ডিটেইলস দিয়ে মেসেজ করলে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে বসবাসরত মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাবার।
মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে মেয়র
ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন মেয়র নাছির। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে সবরকম সহযোগিতা করেছেন তিনি।
করোনাযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করলে ব্যবস্থা
কোনো কোনো বাড়িওয়ালা করোনাযোদ্ধা অনেক নার্স, চিকিৎসকসহ অনেককে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন। যেসব বাড়িওয়ালা এ ধরণের কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। করোনাযোদ্ধাদের থাকার জন্য নগরে কয়েকটি হোটেলের ব্যবস্থা করেন মেয়র।
চিকিৎসকদের পিপিই প্রদান
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদেরকে পিপিই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের মাধ্যমেও কয়েকটি হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। চসিকের মেডিকেলগুলো তৈরি রাখা হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
ঈদে নগর আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপহার
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। করোনাকালে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ৪৮ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী দিয়েছেন মেয়র নাছির। প্রত্যেক ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা পেয়েছেন নাছিরের এই ভালোবাসার উপহার। এছাড়া সাড়ে ৬ হাজার আওয়ামী লীগের অস্বচ্ছল ও দুস্থ নেতাকর্মীদের জন্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন উপহার সামগ্রী। যা নগর আওয়ামী লীগের ইতিহাসে বিরল।
চসিকের উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার
চট্টগ্রামে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা রোগী। ফলে চিকিৎসা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের আগ্রাবাদে সিটি কনভেনশন সেন্টারকে ২৫০ সিটের আইশোলেশন সেন্টার করেছেন মেয়র নাছির। যা ১৫ জুন থেকে চালু হবে।
করোনা চিকিৎসা দিতে বেসরকারি হাসপাতালকে চাপ
করোনাকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো ছিল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বিরত। এই পরিস্থিতিতে নগরবাসী যাতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেন মেয়র নাছির। এরপর থেকে বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগীরাও যাতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই ব্যবস্থা করেছেন মেয়র নাছির।
নগরে করোনার নমুনা নিতে বুথ
করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে নগরের ১২টি স্পটে করোনা টেস্টিং বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। ব্র্যাক বাংলাদেশ’র সহায়তায় এসব বুথ স্থাপন করা হয়। কাট্টলী মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা চসিক পুরাতন নগর ভবন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, মেমন টু হাসপাতাল, অক্সিজেন আবদুর রহিম দাতব্য চিকিৎসালয় ও বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতালে ইতোমধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
রেলওয়ে হাসপাতাল ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করেন মেয়র নাছির। বর্তমানে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে উপহার
নগরের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও গির্জায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভালোবাসর উপহার সামগ্রী দিয়েছেন মেয়র নাছির। এছাড়া করোনাকালে তাদের সব রকম সুযোগ সুবিধা বা খবর রেখেছেন তিনি।
শ্রমিক সংগঠনকে সহায়তা
করোনাকালে বেকার ছিলেন পরিবহন শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, বাবুর্চি, হোটেল বয়সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকরা। তাদেরকে খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও দিয়েছেন মেয়র নাছির। নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নিজেই এসব বিতরণ করেছেন।
করোনায় মৃতদের লাশ দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা
করোনাকালে যারা মারা গিয়েছেন তাদের লাশ স্ব-স্ব ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন ও দাহ করার জন্য বেশ কয়েকটি টিম গঠন করেন মেয়র নাছির। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত টিমগুলোকেও তিনি আর্থিক ও সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেন।
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ সর্দার জয়নিউজকে বলেন, করোনার শুরু থেকে নগরে একজন মানুষকে চট্টগ্রামে মাঠে দেখেছি, তিনি হচ্ছেন মেয়র নাছির। আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তবে যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, তবে এটি সত্য যে করোনাকালে তিনি যেভাবে মানুষের সেবায় কাজ করেছেন তার জন্য চট্টগ্রামবাসী তাকে আজীবন স্মরণ করবে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর চট্টগ্রামে জননেতা হলে তিনি হবেন আ জ ম নাছির।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জয়নিউজকে বলেন, রাজনীতির মূল বিষয় হচ্ছে জনগণের সেবা করা। চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। তাই তিনি মহাদুর্যোগে মানুষের পাশে আছেন। কিন্তু যারা রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নেন তারা মাঠে থাকেন না। সিটি মেয়র মহোদয়কে চট্টগ্রামের জনগণ সবসময় মনে রাখবে।
মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জয়নিউজকে বলেন, আমি রাজনীতি করি জনগণের সেবা করার জন্য। ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। তখন ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। পরে যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই, তখন ক্ষেত্রটি আরো বৃদ্ধি পায়। এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।
তিনি বলেন, আমি রাজনীতি বিক্রি করে চলতে হবে না। তিলে তিলে তৃণমূল থেকে অনেক ত্যাগ, কষ্ট ও শ্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত পৌঁছেছি। তবে এর সবটুকু করেছেন আমাদের মমতাময়ী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমার মতো একজন কর্মীকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র করেছেন। ভবিষ্যতেও তিনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেই অনুযায়ী কাজ করে যাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালি করতে সবসময় মাঠে ছিলাম, আছি থাকবো।
সিটি মেয়র বলেন, প্রায় ৭০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে এনজিওদের পরিসংখ্যানে ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ হতদরিদ্রের আওতায় পড়ে। কিন্তু আমাদের হিসাবে যা প্রায় ২০ লাখ। সরকারি, চসিক পরিবার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরের ৮ লাখ পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছি।