মাত্র দুই বছর চার মাস বয়সের শিশুকন্যা রাইফা। যেন অকালে ঝড়ে পড়া একটি ফুল। বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় প্রাণ কেড়ে নেয় রাইফার, এমনই অভিযোগে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আইনে দরজায় কড়া নেড়ে চলছেন এক বাবা। কিন্তু এভাবেই কেটে গেল দুই বছর। পুলিশ মামলার তদন্তই আর শেষ করতে পারল না।
বর্তমানে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী
তিনি জয়নিউজকে বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হবে।
তবে মামলার তদন্তে হতাশা প্রকাশ করে রাইফার বাবা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য রুবেল খান বলেন, এটি মেডিকেল মার্ডার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে এদেশে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা আমুল পরিবর্তন আসবে। এ জন্যই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তবে গত দুই বছরেও পুলিশের তদন্তই শেষ না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক্।
তিনি আরো বলেন, ‘ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রাইফার অকাল মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে রাইফার চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি ওই ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা যদি সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন দুটি পর্যালোচনা করতে পারেন।
তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের কতিপয় বিএমএ নেতা ও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরকে বাঁচানোর জন্য এখনও নানামুখী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতা ও টাকার জোরে সবকিছুই নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
রাইফার মা রুমানা খান বলেন, ‘রাইফার বড় কোনো অসুখ ছিল না। প্রাণঘাতি অসুখ না হওয়ার পরও চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে সে। যাদের কারণে আমার কোল খালি হয়েছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
জানা যায়, সামান্য গলা ব্যথা নিয়ে ২০১৮ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাইফাকে। তার শরীরে একটি অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করার পর থেকে রাইফার শরীরের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে। শুরু হয় তার শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি। এসময় রাইফার যখন মুমূর্ষু অবস্থা, তখন আবারও ভুল চিকিৎসার শিকার হয় সে। তাকে এনআইসিইউতে না নিয়ে কেবিনের ভেতর সেডিল ইনজেকশন পুশ করা হয়। এভাবে বারবার অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জুন মধ্যরাতে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু কন্যা রাইফা।
ওই বছরের ২০ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাইফা হত্যার অভিযোগ এনে তার বাবা সাংবাদিক রুবেল খানের করা এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে চকবাজার থানা পুলিশ।
মামলা আসামিরা হলেন-শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী, কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দেবাশিষ সেন, ডা. শুভ্র দেব এবং ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী।
জয়নিউজ/কাউছার/পিডি