লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে নিজ সন্তান হত্যা মামলার আসামি বাবা ফয়েজ আহাম্মদ মনুর (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফয়েজ সদরের চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে।
সোমবার (২৯ জুন) রাত আড়াইটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। কারাগারের দায়িত্বরত জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত জানিয়েছেন।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, সোমবার রাতে স্ট্রোক করলে হত্যা মামলার আসামি ফয়েজ আহাম্মদ মনুকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি মামলার এজাহার সূত্র উল্লেখ করে আরো বলেন, এর আগে চন্দ্রগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে দেড় বছরের শিশু কন্যা রাহিমাকে হত্যা করে ফয়েজ আহাম্মদ মনু। এরপর পুলিশ তদন্তে আটকের পর আদালতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক জবানবন্দি রেকড করেন। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এরপর কারাগারে ৪৮ দিন থাকার পর মারা যান তিনি। তার মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মামলার বাদী রাশেদা আক্তার সুমি জয়নিউজকে বলেন, কারাগারে মৃত হত্যা মামলার আসামি ফয়েজ আহাম্মদ মনু তার স্বামী। তিনি সামাজিকতা রক্ষায় মৃতদেহ নিতে এসেছেন। তা না হলে আসতেন না উল্লেখ করে আরো বলেন, প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজের মেয়েকে হত্যা করেন তিনি। স্বামী হিসেবে ঘৃণা করেই সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছি। মামলার বিচার শেষ না হতেই কারাগারে ৪৮ দিন যেতেই তার মেয়ে হত্যার শোকে মৃত্যু হয় মনুর।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের ফয়েজ আহাম্মদ মনুর সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার মতিনের। কোনো ঘটনায় প্রতিপক্ষ মতিনকে কাবু করতে না পেরে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য ফয়েজ নিজের মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ৫ মে বেলা ১২টার দিকে কোলে করে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন তিনি। পরে মেয়ে হারিয়ে গেছে ওই দিন রাত ১০টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হারানোর জিডি করেন ফয়েজ। তিনদিন পর রাতে লাশ ঝোপ থেকে নিয়ে নিজের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন ফয়েজ নিজেই। পরদিন সকালে ফয়েজ থানায় ফোন করে লাশ পাওয়া গেছে বলে পুলিশকে জানানো হয়। শনিবার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে ফয়েজের দেড় বছরের মেয়ে রহিমার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাবা ফয়েজকে। পরে বাবা তার মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে লক্ষ্মীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুর মা রাশেদা আক্তার সুমি বাদি হয়ে স্বামী ফয়েজ আহাম্মদ মনুকে প্রধান আসামি করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।