আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) জিবিসি চেয়ারম্যান ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ আর নেই। শনিবার (৪ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে তিনি দেহত্যাগ করেন।
আগামী সোমবার (৬ জুলাই) বিশেষ বিমানে ভক্তিচারু স্বামী মহারাজের দেহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে নিয়ে আসা হবে। তাকে সেখানে সমাধিস্থ করা হবে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ইসকন জিবিসির চেয়ারম্যান ভক্তিচারু স্বামী মহারাজের প্রয়ানে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ, অসীম কুমার এমপি, এম এ লতিফ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম ইসকনের রিজিওয়ানাল সেক্রেটারি চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, নন্দন কানন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পণ্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক কারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, মোহরা মন্দিরের অধ্যক্ষ সর্বমঙ্গল গৌর দাস, প্রবর্ত্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারুব্রহ্ম দাস ব্রহ্মচারী, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গা দে, সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখার সভাপতি পরিমল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. চন্দন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দাশ অসিত, শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরী, বিশ্ব সনাতন ঐক্যের সমন্বয়ক বিপ্লব পার্থ, হিন্দু ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান দিলিপ মজুমদার, গৌর পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরীসহ হিন্দু নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, তিনি ১৯৪৫ সালে ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শৈশবকালের বাকি সময় কেটেছিল কলকাতায়। ১৯৭০ সালে পড়ালেখার জন্য জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে বৈদিক সাহিত্যের সম্মুখীন হওয়ার পর তিনি ভারতবর্ষেও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ঐশ্বর্যের ব্যাপারে উপলব্ধি করেন। ১৯৭৫ সালে আধ্যাত্মিক প্রগতির উদ্দেশ্যে সচেষ্ট হওয়ার জন্য তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন।
বৈদিক শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করার পর মহারাজ একজন গুরুদেবের আশ্রয় গ্রহণ করার ব্যপারে আগ্রহী হন, যিনি তাঁকে আধ্যাত্মিক মার্গ প্রর্দশন করতে পারেন। একবছর ধরে খোঁজেও তিনি এরকম কোনো গুরুদেব পেলেন না যাঁর চরণে তিনি আত্মসমর্পণ করতে পারেন এবং তিনি খুবই হতাশ হয়ে গেলেন। ঠিক এরকম সময়ে তিনি শ্রীল এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের রচিত ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থটি পান। সেই গ্রন্থটির জ্ঞানগর্ভ তত্ত্ব সম্বন্ধে অবগত হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর গুরুদেব এবং তাঁর পছন্দসই আধ্যাত্মিক মার্গটি পেয়েছেন।
শ্রীল প্রভুপাদের আরও কিছু গ্রন্থ পড়ার পর তাঁর প্রতি নিষ্ঠা বাড়ে এবং তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বাসনাও বেড়ে যায়। সেই সময় শ্রীল প্রভুপাদ আমেরিকায় ছিলেন। ভক্তিচারু মহারাজ তখন মায়াপুরের মন্দিরে যোগদান করেন এবং ভগবানের ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হন। সেইসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করতে লাগলেন।
শ্রীল প্রভুপাদ যখন ১৯৭৬ সালে ভারতে ফিরলেন, অবশেষে শ্রীলপ্রভুপাদের সাথে মহারাজ তখন সাক্ষাৎ করতে পারলেন। সেই প্রথম সাক্ষাতেই শ্রীল প্রভুপাদ মহারাজকে তাঁর গ্রন্থাবলী বঙ্গানুবাদ করার বৃহৎকার্য অর্পণ করেন এবং পাশাপাশি তাঁর ভারতীয় বিষয়ক সচিব নিয়োগ করেন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই শ্রীল প্রভুপাদ তাঁকে গুরু-পরম্পরা ধারার সঙ্গে দীক্ষার মাধ্যমে সম্পৃক্ত করেন। কিছু সময় পরেই তিনি তাঁকে সন্ন্যাস দীক্ষা প্রদান করেন। প্রথম সাক্ষাতে শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশানুসারে মহারাজ তাঁর আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগুলোর পাশাপাশি প্রসিদ্ধ বৈদিক সাহিত্যেও উপর শ্রীল প্রভুপাদের রচিত পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থ বঙ্গানুবাদ করেন।
পরবর্তীতে ইসকন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে এই পর্ষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে মহারাজ তাঁর গুরুদেব শ্রীল এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি জীবনীমূলক চলচ্চিত্র বানানোর বিশাল কার্য সম্পাদন করেন।
এই ধারাবাহিক চলচ্চিত্রটি ‘অভয়চরণ’ নামে সারা বিশ্বে এবং ভারতের দূরদর্শনে দেখানো হয়। বর্তমানে মহারাজ ভারতের উজ্জয়ণীতে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহারাজ উজ্জয়ণী শহরে অত্যন্ত সুন্দর ও সুবিশাল মন্দির স্থাপনা করেন। এই মন্দিরে শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন, শ্রী শ্রী কৃষ্ণ-বলরাম ও শ্রী শ্রী গৌর-নিতাইয়ের আরাধনার জন্য তিনটি বড় সিংহাসন রয়েছে।