করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কার্যকর ফল পাওয়া গেছে। ঢাকায় করোনা আক্রান্তদের ওপর পরিচালিত পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ রোগী সেরে উঠেছেন।
বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি (বিএসএম) এই ট্রায়াল পরিচালনা করে। বুধবার (৮ জুলাই) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সেমিনারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলাফল জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা।
‘বাংলাদেশের হাসপাতালসমূহে করোনা রোগীদের ওপর ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। সেমিনারটি আয়োজন করে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
বিকন ফার্মার উৎপাদিত ওষুধের নাম ফ্যাভিপিরা, এর জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির, যা জাপানে অ্যাভিগান নামে পরিচিত। গত এপ্রিলে ওষুধটি নিয়ে আসে বিকন ফার্মা।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশের চারটি হাসপাতালে ৫০ জন রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। হাসপাতালগুলো হলো- কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের চারদিনের মাথায় ৪৮ শতাংশ এবং ১০ দিনের মাথায় ৯৬ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। পরীক্ষার সময় প্লাসেবা গ্রুপের (যাদের বিকল্প ওষুধ দেওয়া হয়, বাস্তবে তা ওষুধ নয়) ক্ষেত্রে এই হার ছিল চারদিনের মধ্যে শূন্য শতাংশ এবং ১০ দিনের মধ্যে ৫২ শতাংশ। বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারীদের চেয়ে এই ওষুধে রোগীর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা তিনগুণ উন্নতি হয়েছে। তবে জটিল রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই ওষুধ দেওয়া হয়নি।
সেমিনারে বলা হয়, সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এ ওষুধ গ্রহণে রোগীর লিভার, কিডনি ও রক্তে শর্করার কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ফ্যাভিপিরা ও বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারী- এই দুই গ্রুপের রোগীদের উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না।
যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ নন বা কোনও লক্ষণ নেই- তাদের এই ওষুধ গ্রহণে নিষেধ করেন অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা। তিনি বলেন, এই ওষুধটি শুধু তারাই খাবেন, যারা আরটি পিসিআর পজিটিভ।
বিকন ফার্মার প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা। একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে রোগের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সাত থেকে দশ দিনের কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, মাত্র ৫০ জন রোগীর ওপর গবেষণাকে এখনই ফাইনাল বলা যাবে না। আরও কয়েক হাজার রোগী ও ঢাকার বাইরের আরও কয়েকটি হাসপাতালে রোগীদের ওপর এর ট্রায়াল করতে হবে। তবে এখন যেহেতু করোনার চিকিৎসায় কোনও ওষুধ নেই, তাই আর্লি স্টেজে এ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রুটিনলি কোভিড পজিটিভ হলেই অ্যাসিমটোমেটিক রোগীদের এ ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সেমিনারে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধটি কার্যকর ও নিরাপদ কি-না তা জানার জন্যই মূলত বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা ট্রায়াল’। ওষুধ প্রশাসন ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের নিয়ম মেনে এই ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়। এই ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে ডাবল ব্লাইন্ড, প্লেসবো কন্ট্রোলড পদ্ধতিতে।