কোনো ব্যক্তির কারণে রাঙ্গুনিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সব সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকে আমরা মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি। আমাদের বাংলাদেশও ঠিক এরকম সুন্দর। আমাদের রাঙ্গুনিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আরো সুন্দর।
শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সবধর্মের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে আমরা কিভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয় কিভাবে মুসলমান, হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ভাই ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয় সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টানের পাশাপাশি চাকমা মারমারাও আছে। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ।
ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরো শান্তিময় ও প্রীতিময় করার আহ্বান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ফেসবুকে কে একটা লিখলো সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকবো এটাও হতে পারেনা। আমাদের কাছে কে কোন ধর্মাবলম্বি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কে মানুষ কে বাঙালি সেটা বিবেচ্য বিষয়। তাই সবার কাছে অনুরোধ কোনো ব্যক্তির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারেনা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীস্টান। এটিই হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের সঙ্গে যারা বিএনপি জামাত করেন তাদের পার্থক্য।
তিনি আরো বলেন, কদিন আগে রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য আমাকে সরকার থেকে এক কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। তখন আমি ভাগ করে সেখান থেকে চল্লিশ লাখ টাকা দিয়েছি মন্দির, বিহারসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে বলে স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়াকে পরপর দুবার বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। একইভাবে পরপর তিনবার হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য করেছিলাম রাখাল চন্দ্র দাশগুপ্তকে। রাঙ্গুনিয়ায় ইসলাম ধর্মের জন্যও অনেক কাজ করা হয়েছে। বিশেষভাবে টাকা এনে হিন্দু ধর্মীয় মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ধর্মের নেতারা বলেন, যুগ যুগ ধরেই রাঙ্গুনিয়ায় সবধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। ভবিষ্যতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন আলকাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারণ সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দ থের। হিন্দুধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসিম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্জ সংঘের প্রধান পালক রেভারেন্ড সহখরীয় বৈরাগী, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী আস্তানা শরীফের পীরজাদা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, সরফভাটা মোয়াবিনুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবুল বয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাওলানা আইয়ুব নুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার।