পটিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বেলাল উদ্দিন (৪০) হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুর রউফ ভুট্টো (৫২) ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
রোববার (২৬ জুলাই) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুট্টো উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর এলাকার আবদুল আলিমের ছেলে। তার সহযোগী মহিউদ্দিন সাতকানিয়ার সামশুল কবিরের ছেলে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান ও পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেন। ভুট্টোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসা, খুন, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, চুরি ও প্রতারণাসহ আরো ১৭টি মামলা রয়েছে।
জানা যায়, পটিয়ার জিরি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদনগর এলাকায় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় গত ৬ জুন বেলাল উদ্দিন নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গুরুতর আহত হন। ১২ জুন তিনি মারা যান। নিহত বেলাল উদ্দিন ওই এলাকার মরহুম নুর আহমদের দ্বিতীয় ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বেলাল ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন। জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ৬ জুন সন্ধ্যায় মোহাম্মদনগর এলাকায় তার বাড়ির সামনে সন্ত্রাসী ভুট্টো তার সহযোগীদের নিয়ে বেলালকে লোহার রড ও ইট দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত বেলালকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে বাড়িতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেন। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে সন্ত্রাসী ভুট্টো ও তার লোকজন হাসপাতালে নিতে বাঁধা দেয়।
এ অবস্থায় ১১ জুন দুপুরের দিকে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। তখন তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। এরপর দিনভর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ওই রাতে চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ভোর ৬টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বেলাল।
আরো জানা যায়, ইয়াবা, হত্যা, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা ও জায়গা দখলের ১৭ মামলার আসামি ভুট্টো আমেরিকা প্রবাসীর গেটে তালা লাগিয়ে দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এছাড়া ভুট্টোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সে চুক্তিভিত্তিক ঝামেলাপূর্ণ জায়গা দখলবাণিজ্যে জড়িত। সে এক সময়ের যুবদলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ছিল। সরকার পরিবর্তনের রাতারাতি দল পাল্টিয়ে বনে যান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এরপর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এলাকায় ইয়াবা, মাটি, বালি ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম করে সে হয়ে যায় বড় নেতা। মোহাম্মদনগরের ফকির মোহাম্মদ বাড়ির নয়ন ওরফে সুমন হত্যারও প্রধান আসামিও ভুট্টো।
অপরদিকে নিহতের পরিবার আসামিদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা বলেছে, আসামিপক্ষ পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করায় তাদের গ্রেপ্তার করছে না। মামলা তুলে নিতে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকিও দিচ্ছে অভিযুক্তরা। অভিযুক্তের প্রধান আসামির দুই ছেলে ও পশ্চিম পটিয়াভিত্তিক কিশোর গ্যাং লিডার অভি ও সানি বাদিপক্ষকে বলেছে, আমরা থানা কিনে ফেলেছি। কিছুই হবে না আমাদের।
এদিকে বেলাল নিহতের পর মরদেহটি চমেক হাসপাতালের মর্গে ৩৪ ঘণ্টা রেখে করোনায় মারা গেছে এমন খবর প্রচার করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অপচেষ্টা করা হয়। দুদিন ধরে লাশ পড়ে থাকলেও প্রতিপক্ষ টাকার বিনিময়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করতে পাঁয়তারা করে। করোনা পজিটিভের অজুহাত তুলে লাশ ময়নাতদন্ত না করে তড়িঘড়ি করে দাফন করতে চেয়েছিল। পরে নিহত বেলাল উদ্দিনের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
এরপরও পুলিশ হামলাকারীদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলে নিহত বেলালের পরিবার। মারা যাওয়ায় পর সন্ত্রাসী ভুট্টো তার ফেসবুকে একটি পোস্টে দেন- সদ্য আমেরিকা হতে আসা লোকটি বাড়িতে যথাযথ হোম কোয়ারেন্টাইন না মানাতে করোনায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ পোস্টটি দিয়ে সে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার পরিকল্পনা করে।
প্রবাসী বেলাল উদ্দিন সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হওয়ার তিনদিন পর গত ১৪ জুন রাতে মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়। নিহত বেলাল উদ্দিনের স্ত্রী বৃষ্টি আকতার বাদি হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন-ইয়াবা, অস্ত্র, ও হত্যাসহ ১৭ মামলার আসামি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবদুর রউফ ভুট্টো (৪৮) ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সাতকানিয়ার মৃত সামশু কবিরের ছেলে মহিউদ্দিন কবির (৫০) এবং সন্ত্রাসী ভুট্টোর দুই ছেলে অভি (২০), সানি (১৮) ও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন।
নিহতের স্ত্রী বৃষ্টি আকতার জয়নিউজকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী ভুট্টোর হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কে আছি। সে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ আমাদের পরিবারের লোকজনকে বেলালের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। হত্যা মামলাটি তুলে নিতেও নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। আজ আমার স্বামী হত্যা মামলার প্রধান আসামি ভুট্টো ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে আটকের খবরে আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমি বাকি আসামিদেরকেও আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে মামলার দায়িত্বে থাকা কালারপুল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আবু হানিফ জয়নিউজকে বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় আমরা তাদেরকে এতদিন আটক করতে পারিনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে তাদের মধ্যে দুইজনকে আটক করতে পেরেছি। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।