তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, সাংবাদিকরা করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন। তাদের ন্যায়সঙ্গত পাওনা থেকে বঞ্চিত করা মোটেই কাম্য নয়। সেই ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টি মূল্যায়ন করা দরকার।
সোমবার (৩ আগস্ট) সকালে সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনার সংকটকালে সাংবাদিকদের প্রণোদনা দিয়েছে। করোনায় মারা যাওয়া সাংবাদিক পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছে। এ ধরনের প্রণোদনা ও অনুদান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিকবান্ধব। তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করাসহ সাংবাদিকদের কল্যাণে বহু কাজ করেছেন। ভবিষ্যতেও করে যাবেন।
তিনি বলেন, করোনাকালে আমি পত্রিকা মালিকদের বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম যাতে বেতন=ভাতা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করেন। কিন্তু কিছু কিছু পত্রিকা মালিক পরিশোধ করলেও অনেকে তা পরিশোধ করেননি, যা দুঃখজনক।
ড. হাছান বলেন, সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সংবাদপত্রকে টিকিয়ে রাখতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে তাদের মনোবল ভেঙে যায়। তাদের মনোবল টিকিয়ে রাখতে না পারলে কর্মপরিবেশ থাকবে না। আমি মালিকদের আবারো অনুরোধ করব যাতে সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করেন।
তিনি বলেন, অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন করোনা মহামারিতে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। কিন্তু তাদের সে আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই তা হয়েছে। উন্নত দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর চাইতেও বাংলাদেশে মৃত্যুহার অনেক কম।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ ঘরে বসে লম্বা লম্বা কথা বলেন, করোনাকালে একদিনের জন্যেও তারা ঘর থেকে বের হননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকেই মাঠে কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন।
পরে সাংবাদিকদের দাবি দাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তথ্যমন্ত্রীকে হস্তান্তর করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণকালে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আমি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। ন্যায্য দাবিগুলো যাতে মেনে নেন সেজন্য অনুরোধ জানাব।
মতবিনিময়কালে সিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকরা এ বৈশ্বিক মহামারীতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব সাংবাদিক-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকার ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের বিভিন্ন ফ্রিঞ্চ বেনিফিটসহ অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা বকেয়া রাখা হয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে। দেওয়া হচ্ছে না নিয়মিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট। গত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ও পূর্ণ বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে সাংবাদিক-কর্মচারীদের। সাংবাদিকদের ন্যায়সঙ্গত পাওনার দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা উল্লেখ করে নেতারা এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটো, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য মু. মহররম হোসাইন, প্রতিনিধি ইউনিট প্রধান সাইদুল ইসলাম, টিভি ইউনিট প্রধান মাসুদুল হক ও দৈনিক পূর্বদেশের ডেপুটি ইউনিট প্রধান সাইমন চুমুক।