দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর এবং আলশামসের তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করবে সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে তালিকা তৈরির জন্য একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার (৯ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ কমিটি গঠন করা হয়।
রাজাকারদের তালিকা তৈরির জন্য গঠিত সাব কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এবি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।
এ তালিকা তৈরিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য আছেন, তাদেরও সহযোগিতা নেওয়া হবে। এ সাব কমিটি যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে রাজাকারদের তথ্য সংগ্রহ করবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ‘বিতর্কিত’ তালিকা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাতিল করে সরকার।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শাজাহান খান বলেন, এবার সংসদীয় কমিটি তালিকা তৈরি করবে। এ কাজে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন, তাদেরকেও আমরা কাজে লাগাবো। আর তথ্য নেওয়া হবে যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে।
তিনি আরো বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের ব্রিফ করে দেবেন। তারা তালিকা তৈরি করবেন। কোনও একক কর্তৃপক্ষ তালিকা করবে না। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এমপিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা সমন্বয় করবেন।’
তালিকা তৈরি করতে কতদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, যেহেতু এটি খুবই একটি বড় কাজ। কিছুটা সময় তো লাগবে। যার কারণে আমরা কোনও সময় বেঁধে দেইনি। তবে আমি যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছি, ইনশাল্লাহ যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্ভুল তালিকা আমরা তৈরি করতে পারবো।
বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি দেওয়া হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামে তিন প্রজন্ম পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয় না। আমরা তো মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছি। এ বিষয়টি নিয়ে আজ আলোচনা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা যাতে সরকারি চাকরি না পায়, সে বিষয়ে কিছু একটা করা দরকার। সেজন্য রাজাকারদের তালিকাটা দরকার। এই কাজটা এবার আমরা করবো।’
এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, বৈঠকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামি এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদির তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশের জন্য শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ লেখার প্রস্তাব
এদিকে সংসদীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি লেখার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের প্রস্তাব করেছে। মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে।
শাজাহান খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে বীর শব্দ লিখতে হবে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করবে।
বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট ২৪টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, এবি তাজুল ইসলাম এবং মোছলেম উদ্দিন আহম্মদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।