বাজারে আসছে নতুন পত্রিকা ‘দেশ রূপান্তর’। রূপায়ন গ্রুপের মালিকানায় রাজধানীর বাংলামটর থেকে প্রকাশিত হবে পত্রিকাটি। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় একাধিক কাগজে কাজ করা ‘নেপথ্যের মানুষ’ অমিত হাবিব এই পত্রিকাটির সম্পাদক। পত্রিকাটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ, যিনি যুগ্ম সম্পাদক।
‘দেশ রূপান্তর’ বাজারে আনার সম্ভাব্য ডেডলাইন চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ। এর মধ্যে সম্ভব না হলে ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যেই পত্রিকাটি বাজারে আসতে পারে। অক্টোবরের ১৫ তারিখের আগেই মোটাদাগে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ ব্যুরো অফিসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পত্রিকাটির সম্পাদক অমিত হাবিব এর আগে দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা জগতের অনেকেই হয়তো ধীশক্তি’র অধিকারী ও নিভৃতচারী হিসেবে অমিত হাবিবের সুনাম জানেন। স্বনামে কখনো তেমন কিছু লিখেননি। কিন্তু দেশের প্রায় নেতৃত্বস্থানীয় সব কাগজেই গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাবেক হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এন্ড এডিটরিয়াল পলিসি। সাংবাদিক মহলে তিনি খোকন ভাই নামেই পরিচিত। মূলত এরা দু’জনই পত্রিকাটি নিয়ে ভেবেছেন দীর্ঘ সময়।
জানা গেছে, বয়সে তরুণরাই এই পত্রিকার ‘নিউজ ম্যানেজমেন্ট’ সামলাবে। বর্তমানে বাড্ডায় ক্যাম্প অফিসে অস্থায়ীভাবে পত্রিকা গোছানোর আলাপ-আড্ডা চললেও দুয়েকদিনের মধ্যে বাংলামটরের কোম্পানির নিজস্ব ভবনে হাউস গোছানো হবে। এতে ডেপুটি এডিটর হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাহবুব মোরশেদ, ফটো এডিটর হিসেবে আছেন শাহাদাত পারভেজ। চট্টগ্রামে দায়িত্ব নিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক ইকবাল।
পত্রিকাটির যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দিনকে ফেসবুকে মৌলবাদ ও কট্টর বামপন্থার বিরুদ্ধে তীব্র শ্লেষ ঝাড়তে দেখা যায়। ‘সরকারের শেষ সময়ে কেন এই নতুন পত্রিকা?’ এই প্রশ্নটির জবাবে গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ জয়নিউজের প্রতিনিধিকে বলেন, এটি আমাদের দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি। মালিকপক্ষের সাথে দীর্ঘ বোঝাপড়া, হাউজ গোছানো ইত্যাদি নানান সিদ্ধান্তের পর আমরা এখন প্রস্তুত। এর সাথে সরকারের শেষ সময়ের কোন সম্পর্ক নেই। তবে, এখন নির্বাচনের হাওয়া বইছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের পাঠক রাজনীতির খবর জানতে চায়। নির্বাচনী মৌসুম আমাদের সংবাদপত্রের প্রচারণার জন্য একটি উপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে।
নতুন পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি’র ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবজেক্টিভ থাকার চেষ্টা করবো। সাংবাদিকতার নীতিগত প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোন আপোস নেই।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ ছাড়েন। এর আগে দীর্ঘদিন বিডিনিউজের নিউজ এডিটর ছিলেন। তার আগে যায়যায়দিন, প্রথম আলো, ভোরের কাগজে কাজ করেন তিনি। স্বল্প সময়ের জন্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির হেড অফ ইনপুটের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সম্পাদনায় তিনি চৌকস ও দ্রুত সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য হাউসের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ গাজী নাসির উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
অমিত হাবিবের সাবেক প্রতিষ্ঠান কালের কণ্ঠ সূত্র জানায়, সাংবাদিকতায় তিন দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অমিত হাবিবের কর্মজীবন শুরু ১৯৮৭ সালে খবর গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সে একই সঙ্গে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর হিসেবে। পরে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগ দেন তিনি। ওই সময় সহসম্পাদনার পাশাপাশি রাজনীতি ও টেলিভিশন নাটক বিষয়ে নিয়মিত লিখতেন তিনি। পরে ১৯৯১ সালে সিনিয়র সাব-এডিটর হয়ে যোগ দেন দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায়। পরের বছর একই পদে যোগ দেন দৈনিক ভোরের কাগজে। অল্প দিনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও পরে বার্তা সম্পাদক হন তিনি। ২০০৩ সালে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক। ২০০৭ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শেষে ২০০৮ সালে দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি।