করোনার কারণে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে অনলাইনকে হাতিয়ার করে থেমে নেই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বাণিজ্য। এবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার নামে তারা আভিভাবকদের থেকে আদায় করছে পরীক্ষার ফি, সঙ্গে বেতন! অথচ অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনাই দেওয়া হয়নি। করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে এই অনলাইন পরীক্ষা অভিভাবকদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
একাধিক কিন্ডারগার্টেনের বেশ কয়েকজন অভিভাবক জয়নিউজকে জানান, স্কুল থেকে খাতা নেওয়ার নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। বাসায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা উত্তর লেখার পরদিন খাতাটি স্কুলে পৌঁছাতে হয় অভিভাবকদের। এভাবে বাসায় বসে পরীক্ষার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের কতটুকু মান যাচাই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন অভিভাবকরা।
নগরের ঐতিহ্যবাহী সেন্টমেরিস স্কুল। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বন্ধ আছে জামালখানের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। গত সপ্তাহে হঠাৎ ঘোষণা এল- অনলাইনে পরীক্ষা হবে। সেন্টমেরিসের ফেসবুক পেইজে আনলাইন সংক্রান্ত নোটিশে ১৮ আগস্ট থেকে আনলাইন পরীক্ষা শুরু হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এই স্কুলের এক অভিবাবক জানান, স্কুল থেকে বলা হয়েছে পরীক্ষার জন্য খাতা কিনতে হবে। খাতার দাম ১৩০ টাকা, সঙ্গে টেস্ট পেপারের জন্য ৬০ টাকা। একইসঙ্গে বলা হয়েছে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করতে। এতে এটা স্পষ্ট, বেতন আদায়ের কৌশল হিসেবেই পরীক্ষাকে হাতিয়ার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেন্ট মেরিসের এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের ফেসবুক পেইজে অনলাইনে পরীক্ষা নোটিস দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমরা ফেসবুকে ক্লাস নিচ্ছি তার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
ঘরে বসে পরীক্ষা দিলে সঠিকভাবে মেধা যাচাই হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের বলেছি। বাকিটা তাদের উপর, তারা কিভাবে সন্তানদের শিক্ষা দিচ্ছে।
শুধু সেন্ট মেরিস নয় নগরের ছোট-বড় সব কিন্ডারগার্টেন স্কুলেই চলছে পরীক্ষা বাণিজ্য। যার মধ্যে রয়েছে এ জি চার্চ, সেন্ট প্লাসিড, সেন্ট স্কলাস্টিকা, সেন্ট জোসেফ, নন্দন গ্রামার স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে অভিবাবকরা বলছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় সন্তানের পাঠদান শেষ করা যায়নি। আসেননি প্রাইভেট টিউটরও। এরপর আবার কীসের পরীক্ষা? করোনাকালীন বন্ধের সময়ের বেতন-ফি আদায় করতে স্কুলগুলো এ কৌশল নিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
বিষয়টির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এজেডএম শরীফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, প্রাথমিক শ্রেণির স্কুলগুলোতে অনলাইন পরীক্ষার কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে আনলাইনে ক্লাস নিতে উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। স্কুলের বেতন কিংবা পরীক্ষার ফি নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
ফি আদায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়নিউজ/পিডি