জয়নাল আবেদীন, ৩৪ বছরের এক দিনমজুর। যিনি কক্সবাজারের পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডর ভারুয়াখালী গ্রামের শব্বির আহমদের ছেলে। সাধারণ জীবনযাপন করা এই দিনমজুরকে হঠাৎ একদিন পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। একে একে ২৭ দিন তাঁকে থাকতে হলো কারাগারে। এরপর জানা গেল, যে অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই জয়নাল সেই জয়নাল নন।
জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের তার বিরুদ্ধে স্ত্রী শাহানা আক্তার মোহরানার দাবিতে মামলা করেন। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় ২০১২ সালে চকরিয়ার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তিনি মামলাটি করেন (মামলা নং ১৯/২০১২)। এই মামলায় শাহানার স্বামী জয়নালের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করলে সেটি পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।
নামের মিল থাকায় সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় নিরপরাধ জয়নালকে। মামলার আর্জিতে শাহানা উল্লেখ করেন তার স্বামীর নাম জয়নাল আবেদীন, পিতা: শবির আহমদ, বারবাকিয়া ইউনিয়ন। আর্জিতে কোনো ওয়ার্ড কিংবা কোনের গ্রামের উল্লেখ নেই। কিন্তু পেকুয়া থানা পুলিশ গত ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত জয়নালকে গ্রেপ্তার না করে গ্রেপ্তার করে নিরপরাধ জয়নালকে।
স্থানীয়রা জানান, জেলে পাঠানো জয়নালের স্ত্রীর নাম মরিয়াম বেগম। তার স্ত্রী চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বাংলাপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ হোসাইনের মেয়ে। পুলিশের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে নিরপরাধ জয়নালকে।
জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী মরিয়াম বেগম জয়নিউজকে বলেন, আমার স্বামীকে চৌকিদার নুরুল ইসলাম ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে চৌকিদার বলেন, বন মামলায় আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দিবে। আমি স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক দিয়ে চৌকিদারের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিই। চৌকিদার জানান, তোমাদের কাউকে থানায় যেতে হবে না, আমি তোমার স্বামীকে নিয়ে আসব। পরে দেখি আমার স্বামীকে বারাইয়াকাটার নারী সংক্রান্ত একটি মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন জয়নিউজকে বলেন, মামলার বাদী শাহানাকে আমি চিনি না। তাঁর সঙ্গে আমার কোনোদিন দেখাও হয়নি। চৌকিদার ও পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। ২৭ দিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছি।
এখনো প্রাণভয়ে আছেন উল্লেখ করে জয়নাল বলেন, আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পেকুয়া থানার এস আই সুমন সরকার আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দিচ্ছেন।
অভিযুক্ত চৌকিদার নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এইচ এম বদিউল আলম বলেন, দুই জয়নালের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। যে জয়নাল জেল খেটেছেন তিনি নিরপরাধ। তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম বলেন, জয়নাল যদি নিরপরাধ হয়ে জেল খেটে থাকেন তাহলে বিষয়টি মর্মান্তিক। আমার কাছে এলে আমি তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।
জয়নিউজ