রামু ট্র্যাজেডির আট বছর আজ। ২০১২ সালের এইদিনে কক্সবাজারের রামু, পরেরদিন উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ বিহার-পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ১৯ বৌদ্ধ বিহার, ৪১ বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহারসহ অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে। এতে কয়েক শত বছরের প্রাচীন অনেক নির্দশনও পুড়ে যায়।
সেই ক্ষত কাটিয়ে পোড়া মন্দিরে তৈরি হয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাশৈলীতে পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বেড়েছে পর্যটকও। ক্ষতিগ্রস্থরা পেয়েছেন নতুন ঘর। এখনও বিহারগুলোতে সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রেখেছেন।
সারাবছরেই পুজাপার্বন, ধর্মীয় উৎসবে সবাই সরব উপস্থিতে মুখরিত হয় এখন বিহার প্রাঙ্গণ। সবার মাঝে সম্প্রীতি থাকায় খুশি বৌদ্ধরাধর্মালম্বীরাও।
২৯ সেপ্টেম্বর সেই কালো রাতের ঘটনা স্মরণ করে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের উপাধ্যক্ষ শীলপ্রিয় থের বলেন, ঘটনাটি স্মরণ করলে এখনও চোখ দিয়ে জল বের হয়ে যায়। কঠিন সময় গেছে আমাদের। দূর্বৃত্তরা আমাদের বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লী পুড়িয়ে দিয়ে অনেক ক্ষতি করেছে। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তড়িৎ সিদ্ধান্তে ওই সময়ে আমাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুণঃনির্মাণ করা হয় বৌদ্ধ বিহারগুলো।
রামু সহিংসতা স্মরণে সংঘদান ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ। মঙ্গলবা (২৯ সেপ্টেম্বর) ‘লাল চিং ও মৈত্রী বিহার’প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ স্মরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
রামুতে্ এই লাল চিং বিহারে প্রথম অগ্নিসংযোগ করে দূর্বৃত্তরা। রামু পানের ছড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুচারিতা মহাথের এ অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পুণ্যাচার ভিক্ষু সংসদের সাধারণ সম্পাদক, পটিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. সংঘপ্রিয় মহাথের প্রধান আলোচকের ধর্মালোচনা করবেন।
এছাড়া ভোরে বুদ্ধপূজা, সকালে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্ট পরিষ্কার দানসহ মহাসংঘদান, দুপুরে শান্তিপুর্ণ মানববন্ধন, অতিথি ভোজন, বিকালে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যায় সমবেতরা উগ্র-সাম্প্রদায়িক হামলার বিভীষিকাময় আট বছর স্মরণানুষ্ঠানে মানবতা ও শান্তি কামনা করবেন।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু ও উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে চালানো নারকীয় হামলার ১৮ মামলার একটি বিচারও শেষ হয়নি। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় দায়ীরা কেউ শাস্তি পায়নি এখনও। ঘটনারপর বিভিন্ন মামলায় ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় আটকরা সবাই এখন জামিনে। অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে।
কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, রামু সহিংসতার আট বছরে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার পর যেই মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।
কক্সবাজার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বর্তমানে করোনার প্রকোপ ও পুরো কক্সবাজার জেলায় পুলিশ বাহিনীতে বদলিজনিত কারণে মামলার স্বাক্ষীগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশ যদি মামলার স্বাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন এবং স্বাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন তাহলে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।
জয়নিউজ/পিডি