আগুন-বিপদ, হুঁশ নেই কারো। বাহারি গলি, সুখের সংসার, শখের ঘর, নিজের জীবন- হঠাৎ আগুন লাগলে এই ‘সাজানো বাগান’ যে নষ্ট হতে খুব বেশি সময় লাগবে না, ইঙ্গিত মিলছে। পড়ুন বিস্তারিত-
চট্টগ্রামের ওষুধশিল্পের অন্যতম বিপণন কেন্দ্র হাজারীগলি। সাথে আছে জুয়েলারি দোকান আর স্বর্ণের কারখানা। তিন হাজার দোকান আর আনুমানিক কুড়ি হাজার মানুষের বাস এই হাজারীগলি। সাথে আছে বারো মাসের তের পার্বণ। এত বাসা, দোকান আর মার্কেট, অথচ কোথাও নেই অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র, আশ-পাশে নেই কোন জলাধার। স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার অ্যালার্ম তো দূর অস্ত।
শুধু কি হাজারীগলি? না। চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজারের মতো ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকায় আগুনের আতঙ্ক ভয়াবহ। রাস্তাগুলা এতোই সরু যে কখনো আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে পারবে না। আগুন লাগলে তবে কী হবে? হাজারীগলির একটি স্বর্ণে দোকানদারের উত্তর, ‘ভগবানই ভরসা’!
প্রসঙ্গত, খাতুনগঞ্জের আছাদগঞ্জ সড়কের পাশের খালে আজ মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) একটি তেল বোঝাই বোটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়েছে পাশ্ববর্তী ওমর আলী মাকের্টে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চামড়া গুদাম মোড়ে এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ওমর আলী মার্কেটের পাশে খালে থাকা তেলের বোটে আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকে পাশ্ববর্তী ওমর আলী মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চন্দনপুরা ও নন্দনকানন ইউনিটের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সন্ধ্যা সাতটায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল ফায়ার সার্ভিস।
হাজারীগলি ছাড়াও প্রায় একই অবস্থা তার উল্টোদিকের টেরিবাজারের রঘুনাথ বাড়ি, আফিমিগলিসহ আরো কয়েকটি গলির। নগরের রেওয়াজ উদ্দিন বাজার, হকার মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, সিংগাপুর মার্কেটসহ আরো কয়েকটি মার্কেট এবং অলি-গলি আগুন লাগার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন। এই পাড়া আর মার্কেটগুলোয় আগুন লাগলে তাদের আগুন নির্বাপণ গাড়িও ঢুকতে পারবে না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে অনেকবার তাদের সতর্ক করা হয়েছে। কোথাও ফায়ার অ্যলার্ম নেই, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। পানির কোন সহজলভ্যতা নেই। কিন্তু আছে বৈদ্যুতিক তারের কুন্ডলী। এইসব জায়গায় আগুন লাগলে আমাদের কাজ করা শতগুণ কঠিন হয়ে যায়।
হাজারিগলির কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী জয়নিউজকে বলেন, হাজারো দোকান ছিল বলে এর নাম হয়েছিল হাজারিগলি। এইখানে স্বর্ণকারের মার্কেটগুলোয় গ্যাসের সিলেন্ডার ব্যবহার করা হয়, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এইটা দূর্ঘটনা প্রবণ তো বটেই। আমরা এলাকায় বিভিন্ন সময় সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। সামনে দুর্গাপূজায় আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। যাতে এই রকম কোন দূর্ঘটনা ঘটলে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। তবে সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল নিজেদের সচেতনতা। প্রথমিক সুরক্ষা গুলো নিশ্চিত করতে পারলে আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচা সম্ভব।
বছর দু’য়েক আগে হাজারীগলিতে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটানর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেইবার স্বর্ণের মার্কেটে আগুন লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে তিনজন নিহত হয়।
সম্প্রতি চেরাগি মোড়ে ব্রাক ব্যাংকে মহড়া চলাতে দেখা যায় নন্দন কানন ফায়ার সার্ভিস ইউনিটকে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে স্বীকার করে নন্দন কানন ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের ওসি নিউটন দাস জয়নিউজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় মহড়া চালাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে কিনা দেখছি। অফিস কর্মীদের হাতে কলমে শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে আগুন লাগলে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাবে।
জয়নিউজ/ধৃতরাষ্ট্র