হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমৃত্যু আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা শফী হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় হেফাজতে ইসলামের আরেক অংশের কাউন্সিল বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সুপরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হত্যা করেছে। শফী হুজুর স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কারণে তার এ পরিণতি হয়েছে।
তিনি বলেন, শফী হুজুর প্রকাশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের (জামায়াত-শিবির) বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন ও তাদের বিরুদ্ধে বইও লিখেছেন। এ কারণে শফী হুজুরের প্রতি জামায়াত-শিবিরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড।
মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন বলেন, শফী হুজুরকে হত্যার উদ্দেশে ও হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য জামায়াত-শিবির ১৯৮৫ সালে হামলা চালায়। দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও কওমির প্রতি ভালোবাসা থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ হামলা রুখে দিয়েছিলেন শফী হুজুর।
শাপলা চত্বরে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে পা না দেওয়ার কারণে শফী হুজুরকে তখন থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দাবি করে তিনি বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিছু ছাত্রকে উসকে দিয়ে জামায়াত-শিবিরের লেলিয়ে দেওয়া ক্যাডার বাহিনী মাদ্রাসা অবরুদ্ধ রাখে। এসময় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে মীর ইদ্রিছ, নাছির উদ্দিন মুনীর, মুফতি হারুন ও ইনজামুল হাসানদের দিয়ে সেখানে লুটতরাজ ও ভাঙচুর চালায়। এসময় বিভিন্ন ধর্মীয় বইয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, ওইসময়ে জোরপূর্বক হুজুরের কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও হুজুরকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে শফী হুজুরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এতে হুজুর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিলে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। পরে অ্যাম্বুলেন্স আনা হলেও তারা ঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়তে দেয়নি।
মঈনউদ্দীন বলেন, শফী হুজুরকে এভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমরা হুজুরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও তার পরিবারের পক্ষে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচারের দাবি জানাই।
তিনি বলেন, হুজুরের হত্যার বিচারের দাবি না তুলে ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে হুজুরের গড়া সংগঠনকে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অবিলম্বে এ সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন জানান, হুজুরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম অসুস্থ থাকায় তার অনুরোধে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানী হত্যার হুমকি পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী কোষাধ্যক্ষ সরোয়ার আলম, প্রচার সম্পাদক শামসুল হক, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ওসমান কাশেমী প্রমুখ।