মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম টিকার অনুমোদন দেয় ব্রিটিশ নিয়ামক সংস্থা। ফলে সফলভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ টিকাদানে যুক্তরাজ্যই হচ্ছে বিশ্বের প্রথম দেশ।
মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার এবং জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের আবিষ্কৃত টিকার সর্বশেষ ট্রায়ালে প্রতিষেধকটি ৯৫ শতাংশের উচ্চ-সফলতা অর্জন করে।
এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হওয়ায় এবার দেশটিতে জেগেছে মহামারি নিরসনের আশা। আর কর্তৃপক্ষ কীভাবে টিকা কর্মসূচি চালাবেন, তা নিয়েও আগ্রহ বেড়েছে সবার মধ্যে। তাছাড়া দেশটির ইতিহাসে এটাই হবে সবচেয়ে বড় টিকা কর্মসূচি।
যুক্তরাজ্যের কাছে কী পরিমাণ টিকার ডোজ আছে?
এখন পর্যন্ত চালান যা এসেছে তা যথেষ্ট নয়। তবে যুক্তরাজ্য ফাইজারের ৪ কোটি ডোজ কেনার ক্রয়াদেশ আগেই দিয়েছে। জনপ্রতি দুই ডোজ করে ধরে এর মাধ্যমে ২ কোটি লোককে টিকা দেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
দেশটিতে টিকা পাওয়ার যোগ্য ৫ কোটি ৩০ লাখ অধিবাসী রয়েছেন। সবাইকে এর আওতায় আনা হবে না। প্রথমে ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরির পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাজ্য। তবে আগামী বছরের প্রথমভাগে টিকা চালানের পরিমাণ বাড়লে ধীরে ধীরে সকলকে টিকাদানের আওতায় আনা হবে।
কবে থেকে টিকাদান শুরু হচ্ছে?
আগামী সপ্তাহের শুরুতেই ফাইজার/ বায়োএনটেকের টিকাটি পর্যায়ক্রমে বিতরণ শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক কেন্দ্র হচ্ছে যুক্তরাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৫০টি সরকারি হাসপাতাল। পাশাপাশি সহযোগী কেন্দ্রও যুক্ত হবে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই বেলজিয়াম থেকে ৮ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি এসে পৌঁছাবে।
এই চালানের সিংহভাগ পাবেন যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি এমন বয়স্ক নাগরিক ও তাদের পরিচর্যাকারীরা। আরো পাবেন বৃদ্ধাশ্রমের অন্যান্য কর্মচারী এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী সকল বয়োজ্যেষ্ঠ। তারপর জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর তারা টিকাটি পাবেন।
কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় নেতৃত্ব দেবে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ (এনএইচএস)। এরপর ধীরে ধীরে ফার্মেসি এবং বিশেষভাবে তৈরি কেন্দ্রেও টিকাদান শুরু হবে।
টিকা কর্মসূচি কীভাবে কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে?
ফাইজার/ বায়োএনটেকের টিকা বিতরণ খুব একটা সহজ হবে না। কারণ, একে মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের হিম-শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হয়। এজন্য পরিবহন সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে।
বন্দর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাপ-নিয়ন্ত্রক কন্টেইনারগুলো খালাস করা হবে। তারপর বন্দরের বিশেষ হিমাগার থেকেই তা হাসপাতালগুলোর চাহিদা মাফিক বণ্টন করে ট্রাকে করে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হবে। ট্রাকগুলোও বিশেষ কন্টেইনারে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডোজ ভর্তি বিশেষ বাক্স পরিবহন করবে।
দেশটির হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় হিম-শীতল তাপমাত্রায় টিকাটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া বিশেষ বাক্স খোলার পর টিকার ডোজ সাধারণ ফ্রিজারের ২ থেকে ৮ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকে। ওই সময়ের মধ্যেই একেকটি বক্সে থাকা সব ডোজ দিয়ে শেষ করতে হবে।
শুরুর দিকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য টিকা গ্রহীতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। ফলে স্বাস্থ্য কর্মীরা সঠিক সংখ্যা জেনেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ডোজ ভর্তি বাক্স খুলে সাধারণ ফ্রিজারে রাখতে পারবেন।
তবে একটি বড় সমস্যা হলো; ৯৭৫টি ডোজ ভর্তি বাক্সগুলো বয়স্কদের সকল পরিচর্যা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। এব্যাপারে এনএইচএস-এর ইংল্যান্ড শাখার মুখ্য নির্বাহী সাইমন স্টিভেন্স জানান, তিনি আশা করছেন অচিরেই কর্তৃপক্ষ প্রতি বাক্সের চালান নিরাপদ উপায়ে বণ্টনে একটি সমাধান অনুমোদন দেবেন। এরফলে অগ্রাধিকার পাওয়া বয়োবৃদ্ধদের দ্রুত টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
টিকাদান শেষ করতে কতদিন লাগবে?
উত্তরটি খুবই সহজ। আগামী কয়েক মাস ব্যাপী শুধু প্রথমেই অগ্রাধিকার পাওয়াদের টিকা দিতে কেটে যাবে। তবে এপ্রিল নাগাদ সকল সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি এমন সকল নাগরিককে টিকাদানের লক্ষ্য নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এই সময়ে ফাইজার/ বায়োএনটেকের টিকা যথেষ্ট পরিমাণে পাবে না যুক্তরাজ্য। তাই অন্য সংস্থার তৈরি প্রতিষেধকও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।
মডের্না ইঙ্কের ভ্যাকসিন এক্ষেত্রে দ্বিতীয় উৎস হবে। তারপর অক্সফোর্ড/ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও আসবে। সব মিলিয়ে সবাইকে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত দেড় বছর ধরে চালাতে হবে এই কার্যক্রম। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ অবশ্য দুই বছরের বেশি সময় লাগার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন ।