ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্যের ব্যক্তিগত ছবি বিভিন্ন পর্ণ সাইটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে হবিগঞ্জ থেকে আসাদুজ্জামান পলাশ (২১) ও তার স্ত্রী সাদিয়া সরকারকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানায় উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হামিদুল আলম।
মো. হামিদুল আলম জানান, গত ২৬ নভেম্বর ভিকটিমের ছোট বোনের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। তিনি আইডি পুনরুদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন সাইট খোঁজার পর একটি পেইজের সন্ধান পান। পরে ফেসবুক পেইজ ব্যবহারকারী নিজেকে তানজিলা আক্তার তুলি বলে পরিচয় দেয়।
ভিকটিমের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ফোন করে ভিকটিমের বোনের হ্যাক হওয়া আইডি পুনরুদ্ধার করার জন্য টাকা দাবি করে তানজিলা আক্তার তুলি। ভিকটিম একটি বিকাশ নাম্বারে দাবিকৃত টাকাও দেন।
২৮ নভেম্বর রাত ৩টায় ওই মহিলা ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে ভিকটিমকে ফোন করে বলে ফেসবুক ৫ মিনিট সময় দিয়েছে আইডি রিকভারি করতে। তবে এ জন্য জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট লাগবে জানিয়ে একটি লিংক পাঠানো হয়। ওই লিংকে ভিকটিমের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করার জন্য বলে তানজিলা।
ভিকটিম ওই লিংকে ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া মাত্রই ভিকটিমের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি লগআউট হয়ে তার অ্যাকাউন্টও হ্যাক হয়ে যায়। এ ঘটনায় ভিকটিম অন্য একটি ফেসবুক আইডি থেকে তানজিলাকে মেসেঞ্জারে ফোন করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায়, ভিকটিমের আইডি সে হ্যাক করেছে।
পরে ভিকটিমকে ওই হ্যাকার অশ্লীলভাবে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করার জন্য প্রস্তাব দেয়। হ্যাকারের প্রস্তাবে ভিকটিম রাজি না হলে সে মেসেঞ্জারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। হ্যাক হওয়া ফেসবুক থেকে ভিকটিমের স্বামী ও তার ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করে তা ইন্টারনেটে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।
এমনকি ভিকটিমের নামে পর্ণ ওয়েবসাইট খুলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে হ্যাকার হ্যাক করা আইডি থেকে ভিকটিমের বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও অশ্লীলভাবে এডিট করে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় ভিকটিম ৩ ডিসেম্বর হালিশহর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে সিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট হবিগঞ্জের মাহমুদাবাদ থেকে তাদের গ্রেফতার করে। সাইবার ক্রাইম টিমকে সহায়তা করে হবিগঞ্জ জেলার গোয়েন্দা বিভাগ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, এই দম্পত্তি বিভিন্ন ফেসবুক আইডি রিকভার করে দেওয়ার নামে, ফেসবুক পেইজ বুস্ট, ফেসবুক আইডি ভেরিফাইড এবং পেইজের ফলোয়ার বাড়ানোর চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কৌশলে আইডি হ্যাক করে। পরে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও সংরক্ষণ করে পর্ণ সাইটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতো। তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছে।
তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে দুইটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট, ৬টি ভুয়া রেজিস্টার্ড সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতো। তাদের মোবাইলে অর্ধশত ফেসবুক আইডির লগইন এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে।