অদম্য আলীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

দুটি হাত না থাকলেও আক্ষেপ নেই লোহাগাড়ার মোহাম্মদ আলীর। প্রতিবন্ধীতাকে জয় করেছেন তিনি দৃঢ় মনোবলে। হাতের সব কাজ পায়ে রপ্ত করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স পড়ছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন এখন তার চোখে।

- Advertisement -

আলীর বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের হরিদাঘোনা এলাকায়। জন্মগতভাবে দুটি হাত নেই আলীর। এ নিয়ে তার মা-বাবা ছিলেন দুশ্চিন্তায়। তাকে দেখে পরিবারের সবাই নীরবে চোখের জল ফেলতো। কিন্তু সব বাধা অগ্রাহ্য করে নিজের চেষ্টায় স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন আলী।

- Advertisement -google news follower

বাড়িতে বসে কথা হলো আলীর সাথে। আলী জানান, আমার মা চেয়েছিলেন আমি যেন অন্তত লেখাপড়াটা চালিয়ে যায়। ছয় বছর বয়সে মায়ের অনুপ্রেরণায় পায়ে লেখা শেখার চেষ্টা করি। প্রায় দুই বছরের চেষ্টায় পায়ে বাংলা ও ইংরেজি অক্ষর লেখাটা রপ্ত করি।

আলী জানালেন, একমাত্র মনোবলের কারণে আজ আমি এতটুকু আসতে পেরেছি। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে পারতাম না বলে দুঃখ হতো। তবে শিক্ষক ও সহপাঠীরা খুব সহযোগিতা করতো। ভবিষ্যতে যদি একটি সরকারি চাকরি পাই, তাহলে আমার এ চেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

- Advertisement -islamibank

আলীর মা শামসুন্নাহার বেগম জানান, ছেলেটি দুটি হাত ছাড়া জন্ম নেওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। যেন সব দোষ আমার ছিল। প্রতিবেশীরা মনে করতো তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আমার অন্য ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলে পড়তে যেত, আমি চাইতাম তাকেও (আলী) পড়াতে। হাতের বদলে পায়ে লেখা শেখাতে লাগলাম। আমার বড় মেয়ে চম্পা তাকে সহযোগিতা করতো। অবশেষে পায়ে লেখা মোটামুটি রপ্ত করায় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাই। কিন্তু কোনো স্কুল তাকে ভর্তি করেনি। অবশেষে উত্তর বড়হাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তাকে স্কুলে ভর্তি করে নেন। বর্তমানে সে হাতের সব কাজ পায়ে করতে পারে। মোবাইল ফোন, কম্পিউটারও চালাতে পারে। সে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতিমাসে পাঁচশো টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়।

এ ব্যাপারে শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, যখন দেখি পা দিয়ে ইংরেজি-বাংলা অক্ষর লিখতে পারে, তাকে আমি স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিই। সে নিয়মিত স্কুলে আসতো এবং পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলো। পরীক্ষার সময় দুটো বেঞ্চ পাশাপাশি লাগিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নিতাম। প্রতিবন্ধী বলে কোনো অতিরিক্ত সুযোগ সে পেতো না। পা দিয়ে হাতের চাইতে দ্রুত ও সুন্দরভাবে লিখতে পারতো।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আসলাম জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে লেখাপড়াসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিতে চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্য আরমান বাবু জানান, আমরা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা-চিকিৎসাসহ অন্যান্য মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করি। আলীকে ইতোমধ্যে ল্যাপটপ দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আরো সহযোগিতা করা হবে।

জয়নিউজ/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM