২০০৭ সালে বন্ধুর অনুরোধে ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে কেডিএস গ্রুপে যোগ দিয়েছিলাম। প্রায় ১১ বছর রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে কেডিএস এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কে ওয়াই সিআর কয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং কেওয়াই স্টিল লিমিটেডকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ঢেউটিন উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছি। বিনিময়ে জুটেছে ৯ মাসে ২৮টি মামলা এবং এক বছরের জেল।
আদালত থেকে জামিন নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে নিজের এবং পরিবারের সেই করুণ ঘটনা তুলে ধরেন কেডিএস’র সাবেক পরিচালক মুনির হোসেন খান।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল কোম্পানির ডিএমডি ইয়াছিন রহমান টিটু কর্তৃক মারধরের শিকার হয়ে চাকরি ছাড়ার পর তিনি তাদের রোষানলে পড়েছেন।
টাকার জোরের কাছে বিপন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ২৮ নভেম্বর কেডিএস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কে ওয়াই স্টিলের পক্ষে তাদের চিফ অপারেশন অফিসার জাবির হোসাইন সাংবাদিক সম্মেলন করে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন।
শুধু তাই নয় চাকরি ছাড়ার ২০ মাস পর ২০১৯ সালের নভেম্বর নজিরবিহীনভাবে ৯ মাসে ২৬টি মামলা ক্রিমিনাল ও দুইটি সিভিল মিথ্যা মামলা করেছে। আইনের অপব্যবহার করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একেক সময় একেক ধরনের কুৎসাও রটাচ্ছে। যা বিভ্রান্তিমূলক ও মানহানিকর।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলা ছিল গাড়ি চুরি ও হত্যা চেষ্টা। বায়েজিদ থানায় দায়েরকৃত মামলাটিতে যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে সেসময় ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছিলাম। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর একবছর জেলে ছিলেন। সম্প্রতি মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ অভিযোগ ছিল মিথ্যা।
তাদের আরেকটি অভিযোগ হল এইচ আর কয়েল আমদানিতে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা কমিশন খাওয়া। যা হাস্যকর। এত টাকা কোন ব্যক্তির কাছে থাকলে তা কোন না কোন সরকারি সংস্থার চোখে পড়বেই। দেশে কিংবা বিদেশে আমার এবং আমার পরিবারের এই ধরণের কোনো সম্পত্তি নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করলে কাস্টমস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেওয়াই স্টিল অথবা কেওয়াই স্টিল ইন্ড্রাস্টিজকে টাকা পাচারের অভিযোগে অনেক আগেই ব্যবস্থা নিত। বর্তমান চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) জাবির হোসাইন বিভিন্ন জাল ও ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করেই কেডিএস কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে নিজে ফায়দা লুটছে। কারণ কমিশন খাওয়ার অভিযোগ করলেও ওই কমিশন কোন ব্যাংকের মাধ্যমে খেলাম বা কোথায় রাখলাম তার কোন তথ্য নেই।
তিনি যে চুক্তি দেখাচ্ছেন তা জাল এবং অসম্পূর্ণ। কে ওয়াই স্টিলের সংবাদ সম্মেলনে জাবির হোসাইন একটি অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানির বাজার মূল্য বেশি দামে পণ্য কেনার দেখিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। বাস্তবে আমার কাছে সে সুযোগ ছিল না। কারণ কেডিএস এর ব্যাংক একাউন্ট থেকে সরাসরি রপ্তানিকারককে টাকা দেওয়া হয়েছে এলসির মাধ্যমে।
অন্যদিকে যে বাজারমূল্য প্রদর্শন করছে তাও সঠিক নয়। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সারাবিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড এইচ আর কয়েলের একটি সম্ভাব্য বাজার মূল্য দিয়ে থাকে। কিন্তু কিনতে গেলে গুনগত মান, থিকনেস এবং দেশের দুরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় দামের কম-বেশি হয়। এর সাথে ভাড়া ও অন্যান্য খরচ ও যোগ হয়। তাই যে সংস্থাটি বাজার মূল্য দিয়ে থাকে তাদের ওয়েবসাইটেই বিষয়টি লেখা থাকে যে মূল্য তারা প্রদর্শন করছেন তা শুধু মার্কেট সম্পর্কে একটা ধারনা দেওয়া। প্রকৃত মূল্য ভিন্ন হতে পারে। অথচ জাবির ওই ওয়েবসাইটের মূল্য দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে এত বড় একটি মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আমি যেসময়ে এইচ আর কয়েল আমদানি করেছি তখন চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের আরো অনেক কোম্পানি এইচআর কয়েল আমদানি করেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সেই সময়ের তথ্য যাচাই করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া কয়েলের থিকনেস এবং গুনগত মান ও পরিমাণের উপরও দামের কম বা বেশি হয় এবং এই এইচআর কয়েলের মূল প্রতি মাসেই দর উঠানামা করে। এটি একটি খুবই ভোলাটাইল আমদানিকৃত পণ্য যা প্রমাণ আকারে দেখানো যাবে।
কেডিএস নতুনভাবে হয়রানি করছে এমন অভিযোগ করে মুনির হোসেন খান বলেন, তার বাবা চট্টগ্রাম বন্দরের একজন অবসরপ্রাপ্ত হারবার মাস্টার। বড়পুল এলাকায় তার বাবা ইসাবেলা টাওয়ার নামে একটি ভবন করেছেন তাও তিনি কে ওয়াই স্টিলে যোগদানের আগে। তিনি তার দীর্ঘ ১৭ বছর আমেরিকার জীবনে অনেকবার বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ও করেছেন। তার প্রমাণাদিও কাছে উল্লেখ করে মুনির খান বলেন, কেডিএস সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে তার পরিবার থেকে কেউ যাতে কোন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি না কিনে। যা সম্পূর্ণ মানহানিকর এবং বেআইনি। কারণ এসংক্রান্ত আদালতের কোন নির্দেশনা নেই।
তিনি বলেন, জাবির হোসাইন কিছু ভূয়া চুক্তিপত্র, আমার স্বাক্ষর এবং বিদেশি স্বনামধন্য কোম্পানির স্বাক্ষর জাল করে ফটোকপির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা দিয়ে হয়রানি এবং নাজেহাল করেছে। একটি মামলা থেকে জামিন হওয়ার আগেই আরেকটি মামলা দিয়ে আমাকে আটক রাখছে।
মুনির খান বলেন, কেডিএস তার মাসিক বেতন, সন্তানদের লেখাপড়া, বিদেশ ভ্রমণ এবং ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। বেতন কোথাও দুই লাখ টাকা কোথাও তিন লাখ টাকা উল্লেখ করেছে। এর কোনটাই সত্য নয়।
অন্যদিকে তারা প্রশ্ন তুলেছে, আমার মেয়ে কিভাবে ব্যয়বহুল ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে লেখাপড়া করছে। অথচ আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ কেডিএস কর্তৃপক্ষই বহন করেছে। এই সকল কিছুরই তথ্য প্রমাণাদি আমার কাছে আছে। তাছাড়া আমদানিকৃত মালামাল বন্দর থেকে ক্লিয়ারিং করতেন কে ডি এস অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে একই পণ্য খালাস করছেন। দেশের প্রখ্যাত অডিট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের অডিট হত। কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম ঘটে থাকলে অডিট আপত্তি আসত। তাছাড়া মাসিক অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোম্পানির গ্রুপ অডিট এবং সিএফও তৈরি করতেন এবং তা তাদের কাছেও যেত। দীর্ঘ ১১ বছরে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার আইনজীবী যদি পরামর্শ দেন তাহলে কেডিএসের বিরুদ্ধে মামলা করবো। তবে আমি চাই কেডিএসের সকল মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে।
জয়নিউজ/কাউছার/পিডি