পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, চট্টগ্রামের হালদা নদী দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র। কাজেই হালদাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না। হালদা নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল সংস্থাগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে শিল্পনগরীর কাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং হালদা নদী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবেই সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার এই নদীটির উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশে এবং শেষও এ দেশে। গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি রক্ষা করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নদীর জীববৈচিত্র্য, ডলফিন, পরিবেশ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা করে নদীর যাতে কোনোরকম ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ‘হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- বিষয়ে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাত্তার ঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্বও করেন তিনি।
পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)। হালদা থেকে পানি উত্তোলন নিয়ে নানা বিতর্কের পর এবারই প্রথম নদীর পাড়ে এমন সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মূখ্য সচিব ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব রোকনুদ্দৌলা, আইডব্লিউএম’র নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী অকিল বিশ্বাস।
এতে মূল বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া এবং আইডব্লিউএম’র উপ-নির্বাহী পরিচালক এসএম মাহবুবুর রহমান।
হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আইডব্লিউএম’র রিপোর্ট কোনো বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার ভিত্তিতে নয়, তথ্যগত যথেষ্ট মিথ্যাচার করার মাধ্যমে পানি উত্তোলনের যুক্তি দেখানো হয়েছে। রিপোর্টে কোনো তথ্যগত ডাটা এবং পরিমাপের পদ্ধতিগত অস্তিত্ব নেই। আইডব্লিওএম’র তথ্যে হালদা থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চে সর্বনিম্ন ভাটায় মোহরায় পানির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৬০০-২১৫০ এমএলডি, যার গড় পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৭৫ এমএলডি।
তিনি বলেন, একই সময় নদী থেকে ওয়াসার দৈনিক পানির চাহিদা ৫৬১ এমএলডি, অথচ যার সহজ ঐকিক নিয়মে নদী থেকে মোট পানি উত্তোলনের পরিমাণ হয় প্রায় ২৯.৯২%। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসকে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের প্রজননের পূর্ববর্তী মাস বলে। এ সময় মাছের গোনাডের পরিপক্কতা ও বৃদ্ধির জন্য নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গুণগত মানসম্পন্ন পানি এবং প্রচুর পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয়। যদি সেই সময়ে নদীর পানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ (২৯.৯২%) তুলে ফেলা হয় তাহলে পানিস্বল্পতা এবং লবণাক্ততার কারণে হালদায় রুই জাতীয় মাছসব জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যদিও সম্প্রতি হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর জন্য পানির চাহিদা পূরণে হালদার পরিবর্তে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে বলে মনে করেন হালদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে হালদা নদী থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিতে একটি নতুন প্রকল্প তৈরি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ নিয়ে পরিবেশগত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য জমা দেয় আইডব্লিউএম। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সভায় প্রণীত সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে নানা অসঙ্গতিতে বির্তক সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে সমীক্ষা রিপোর্টটি পুনরায় রিভিউ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হয়।