অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন চার দিনে চলে আসবে চট্টগ্রাম টেস্টের ফল। কিন্তু মাঠের ক্রিকেট বললো অন্য কিছু। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ম্যাচের সব রোমাঞ্চ জমা থাকলো পঞ্চম দিনে। দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের চাই ৭ উইকেট, বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হবে ২৮৫ রান।
৩৯৫ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবিয়ানরা চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১১০ রানে। শেষ দিনের কঠিন পরীক্ষায় করতে হবে ২৮৫ রান। আবহাওয়া বিরূপ আচরণ না দিলে চট্টগ্রামের প্রথম টেস্টের ফল আসছে নিশ্চিত।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর সফরকারীদের হাল ধরেছেন কাইল মায়ার্স ও এনক্রুমা বনার। শেষ বিকেলে বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমতো শাসন করেছেন মায়ার্স। তিনি ৫০ বলে অপরাজিত ৩৭ রানে। আর ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করে পঞ্চম দিনের অপেক্ষায় ১৫ রান করা বনার। এরই মধ্যে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি গড়েছেন তারা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবিয়ানদের হারানো ৩ উইকেটের সবকটি নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫২ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। সফরকারীদের উদ্বাধনী জুটিই ভাঙা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে জন ক্যাম্পবেল বেশ চড়াও হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। অবশেষে স্বাগতিকদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেন মিরাজ।
এই স্পিনার একজনকে নয়, ২ ওভারে ফিরিয়েছেন ক্যারিবিয়ানদের দুই ওপেনারকে। ১৭তম ওভারে ক্যাম্পবেলকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ১৯তম ওভারে বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলীর ক্যাচ বানান ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে। মিরাজের জোড়া আঘাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮ রানে হারায় ২ উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণার পর বোলিংয়ে নেমে সফরকারীদের উইকেট দ্রুত তুলে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। তবে শুরুটা প্রত্যাশামতো হয়নি। কেননা ব্র্যাথওয়েট ও ক্যাম্পবেল মিলে ভালোই পরীক্ষা নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান-তাইজুল ইসলাম-মিরাজদের। তারা বেশ কয়েকবার ভালো সুযোগ তৈরি করলেও জুটি ভাঙা যাচ্ছিল না।
প্রথম ইনিংসে দারুণ বোলিং করা মিরাজের হাত ধরে আসে প্রথম সাফল্য। তার বল সুইপ করতে গিয়ে পায়ে লাগে ক্যাম্পবেলের। ফিল্ড আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ২৩ রান করে এলবিডাব্লিউয়ের শিকার তিনি।
ক্যাম্পবেলকে আগের ওভারে বিদায় করে মিরাজ পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ব্র্যাথওয়েটকে। ২০ রান করে সফরকারী অধিনায়ক ফেরেন ইয়াসিরকে ক্যাচ দিয়ে।
এখানেই থামেননি মিরাজ। খানিক পর ফেরান তিন নম্বরে নামা শেন মোসেলিকে। ১২ রান করে এই ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফেরেন এলবিডাব্লিউ হয়ে। তার বিদায়ের সময় ক্যারিবিয়ানদের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৫৯। এরপর আর বিপদ আসতে দেননি মায়ার্স-বনার জুটি।
আরও পড়ুন: ইনিংস ঘোষণা করে কঠিন লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ
এর আগে ৮ উইকেটে ২২৩ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতে মুশফিকুর রহিমকে হারিয়ে চাপ তৈরি হলেও মুমিনুল হক ও লিটন দাসের চমৎকার ব্যাটিংয়ে সেই ধাক্কা কাটিয়ে বড় লিডের পথ তৈরি হয়। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। আর লিটন পান লাল বলের ক্রিকেটের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি।
প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুমিনুলের ব্যাট। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া লিটন দাসও পেয়েছেন ফিফটি। যদিও ৬৯ রানে ফিরেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। লিটনের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে গেছেন মুমিনুলও। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে কেমার রোচের হাতে ধরা পড়ার আগে খেলেছেন ১১৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। ১৮২ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১০ বাউন্ডারিতে।
তার বিদায়ের পর বাংলাদেশ দ্রুত হারায় তাইজুল ইসলাম (৩) ও মিরাজের (৭) উইকেট। মিরাজের আউটের পরই ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। এ সময় ১ রানে অপরাজিত ছিলেন নাঈম হাসান।
এর আগে চতুর্থ দিন শুরু করেছিলেন মুশফিক-মুমিনুল। মুশফিক অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রাকিম কর্নওয়ালের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। তার বিদায়ে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মুমিনুল শেষ করেছিলেন দ্বিতীয় দিনের খেলা। দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও উইকেটে যেহেতু তারা আছেন, তাই আাশার পালে হাওয়া লাগছিল জোরেশোরেই। উইকেটে তারা যতক্ষণ টিকে থাকবেন, ততই দলের মঙ্গল। মুশফিক সেটি পারেননি। আগের দিনের ১০ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা মুশফিক আজ (শনিবার) ৮ রান যোগ করে ফিরেছেন ১৮ রান করে।
কর্নওয়ালের বল ফ্রন্টফুটে খেলতে গিয়ে ব্যাটে লাগেনি, আঘাত করে তার পায়ে। প্রথমে ক্যারিবিয়ানরা স্টাম্পিং মিসের আফসোস করলেও বোলার কর্নওয়ালের আবেদনে আম্পায়ার এলবিডাব্লিউয়ের আউটের সংকেত দেন। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মুশফিক রিভিউ চাইলেও কাজে আসেনি।
সফরকারীদের সবচেয়ে সফল বোলার রাকিম কর্নওয়াল ও জোমেল ওয়ারিকান। দুজনই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। আর ২ উইকেট পেয়েছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৪৩০ রান। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছিল ২৫৯ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(চতুর্থ দিন শেষে)বাংলাদেশ: ৪৩০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭.৫ ওভারে ২২৩/৮ (ডিক্লে.) (মুমিনুল ১১৫, লিটন ৬৯, মুশফিক ১৮, মিরাজ ৭, সাদমান ৫; ওয়ারিকান ৩/৫৭, কর্নওয়াল ৩/৮১, গ্যাব্রিয়েল ২/৩৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ ওভারে ১১০/৩ (মায়ার্স ৩৭*, ক্যাম্পবেল ২৩, ব্র্যাথওয়েট ২০, বনার ১৫*, মোসেলি ১২; মিরাজ ৩/৫২)।