ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪০৯ রানের জবাবে নেমে প্রথম ইনিংসে পর্যদুস্ত বাংলাদেশ। ১০৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে স্বাগতিকরা।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই ১১ রানে ২ উইকেট হারায় টাইগাররা। ওই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ যখন তামিম-মুমিনুলের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, তখনই আবার উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দৃশ্য।
ক্রিজে থিতু হওয়ার পরও ৪ বলের ব্যবধানে ফেরেন তামিম ইকবাল (৪৪) ও মুমিনুল হক (২১)। এরপর মুশফিকুর রহিম (২৭*) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৬*) দিনের বাকিটা পার করে দেওয়ায় বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৩৬ ওভারে ৪ উইকেটে ১০৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে প্রথম ইনিংসে এখনও পিছিয়ে ৩০৪ রানে।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ঝড়ে শুরুতেই এলোমেলো বাংলাদেশ। ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে দলের বিপদ বাড়িয়ে যান সৌম্য ও শান্ত। প্রায় দেড় বছর পর টেস্টে ফিরেছেন সৌম্য। সাকিব আল হাসানের চোটে দলে সুযোগ পেলেও ঢাকা টেস্টের একাদশে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আসলে খেলছেন চোটে পড়া ওপেনার সাদমান ইসলামের জায়গায়। ওপেনারের ভূমিকায় নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ তিনি। নির্বাচকদের আস্থার জবাব একেবারেই দিতে পারলেন না প্রথম ইনিংসে। তার ইনিংসের দৈর্ঘ্য মোটে ৪ বল। রানের খাতা খোলার আগেই শিকার গ্যাব্রিয়েলের।
সৌম্য না হয় অনেকদিন পর লাল বলের ক্রিকেটে, কিন্তু শান্তর ক্ষেত্রে তো বিষয়টি তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত মুখ তিনি। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও খেলেছেন। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে কিছুতেই বেরোতে পারছেন না এই তরুণ ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে হতাশ করা শান্ত আবারও ব্যর্থ। মাত্র ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। আগের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গ্যাব্রিয়েলের পরের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন এনক্রুমা বনারকে। মাত্র ২ বল স্থায়ী ছিল তার ইনিংস।
শুরুর ওই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ভালো কিছুর ইঙ্গিত মিলেছিল তামিম ও মুমিনুলের ব্যাটে। জুটির ফিফটি করে দলের রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু এই ভালো সময়ের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ থাকেনি। মুমিনুলের বিদায়ের পরপরই তামিম প্যাভিলিয়নে ফিরলে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। ৪ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
১১ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু তামিম-মুমিনুলের। দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়েও উঠেছিল। কিন্তু ভুল হয়ে গেল মুমিনুলের। রাকিম কর্নওয়ালের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল তার ব্যাটে লেগে জমা হয় উইকেটকিপার জোশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে। ৩৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২১ রান করা মুমিনুলের বিদায়ে ভাঙে তামিমের সঙ্গে তার গড়া ৫৮ রানের জুটি।
সঙ্গীকে হারিয়ে তামিমও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। কয়েক বল পরই ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রান বাড়িয়ে নেওয়াই কাল হলো তামিমের। আলজারি জোসেফের বলে মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি শেন মোসেলির হাতে। ফেরার আগে ৫২ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় খেলেন ৪৪ রানের ইনিংস।
ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে সফল বোলার গ্যাব্রিয়েল। এই পেসার ৩১ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন কর্নওয়াল ও জোসেফ।
এর আগে ক্যারিবিয়ানদের অলআউট করার পথে তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ রাহী দুজনই নেন ৪টি করে উইকেট। কিন্তু তাদের জ্বলে ওঠাটা একটু দেরিতে হয়ে গেছে! তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে গড়ে ফেলে বড় স্কোর। সেঞ্চুরির কাছাকাছি যাওয়া তিন হাফসেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা অলআউট হওয়ার আগে করেছে ৪০৯ রান।
আস্থার জবাব দিয়ে তাইজুল বোলিং করেছেন ৪৬.২ ওভার। তার বলে গ্যাব্রিয়েলের বিদায়ে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা। বাঁহাতি স্পিনার ১০৮ রান দিয়ে পেয়েছেন ৪ উইকেট। অন্যদিকে চট্টগ্রাম টেস্টে উপেক্ষিত থাকার জবাব রাহী দিয়েছেন ৪ উইকেট তুলে নিয়ে। ২৮ ওভারে তার খরচ ৯৮ রান। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সৌম্য সরকার। নাঈম হাসান ২৪ ওভার বল করেও সাফল্য পাননি।
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটাও ভালো যায়নি বাংলাদেশের। এরপর লাঞ্চ থেকে ঘুরে এসেও সুবিধা করতে পারেনি। তবে তাইজুল ও রাহী জ্বলে ওঠায় ২৫ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারীরা বড় সংগ্রহ দাঁড় করালেও আক্ষেপ আছে যথেষ্ট। তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তিন অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। জোশুয়া দা সিলভা ৯২, এনক্রুমা বনার ৯০ ও আলজারি জোসেফ আউট হয়েছেন ৮২ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(দ্বিতীয় দিন শেষে)বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংসে ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম ৪৪, মুশফিক ২৭* মুমিনুল ২১, মিঠুন ৬*, শান্ত ৪, সৌম্য ০; গ্যাব্রিয়েল ২/৩১, কর্নওয়াল ১/১৮, জোসেফ ১/৩৪)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: প্রথম ইনিংসে ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (জোশুয়া ৯২, বনার ৯০, জোসেফ ৮২, ব্র্যাথওয়েট ৪৭, ক্যাম্পবেল ৩৬, ব্ল্যাকউড ২৮; রাহী ৪/৯৮, তাইজুল ৪/১০৮, সৌম্য ১/৪৮, মিরাজ ১/৭৫)।