চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অবকাঠামোগত সমস্যা দীর্ঘ দিনের। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হতো না নিয়মিত। হলের অভাবে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছিলো না শিক্ষার্থীদের। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে চলমান প্রায় ২৬০ কোটি টাকার আটটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ আবাসন ও একাডেমিক সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর ধরে সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত ছিল চবি। বেদখল হয়েছে একরের পর একর জমি। বর্তমানে ১৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর। গত সাড়ে তিন বছরে হাতে নেওয়া এসব প্রকল্প ছাড়িয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। এতো অবকাঠামো উন্নয়নের একসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়নি গত ৫০ বছরে!
এ বিষয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নানা কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরেও নির্মাণ হয়নি সীমানা প্রাচীর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত নয় বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি আবাসিক হল নির্মাণ শেষে পথে। দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবন, বায়োলজিক্যাল অনুষদ ভবন, মেরিন সায়েন্সের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে চলছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের পর নির্মিত হয়েছে সীমানা প্রাচীর। আবাসিক হল ও ভবনগুলো হয়ে গেলে ২৫ শতাংশ আবাসিক ও একাডেমিক সমস্যার সমাধান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমানে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য দুটি করে চারটি আবাসিক হল নির্মাণ কাজ চলছে। তার মধ্যে ছাত্রীদের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ২২৫ আসন বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ছাত্রদের জন্য নির্মাণাধীন ৭৫০ আসনের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। নির্মাণাধীন ২২৫ আসনের অতীশ দিপঙ্কর হলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ চারটি হলের নির্মাণ কাজ আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ কথা রয়েছে। এছাড়া ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান শিক্ষার্থীদের জন্য দু’টি হল। এ হল দু’টির প্রত্যেকটিতে ৩১২ জনের আসন রয়েছে।
অন্যদিকে একাডেমিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমানে তিনটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলছে চবিতে। তার মধ্যে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নতুন একাডেমিক ভবন। গত বছর প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। এছাড়া ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনষ্টিটিউটের নির্মাণ কাজের উদ্ধোধন করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণের পর দীর্ঘ ১৩ কেলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। যার প্রাথমিক পর্যায়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।