ভাষার মাসে রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহরের ১১ নম্বর সেক্টরে ইস্পাত প্রস্তুত শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের অর্থায়নে নির্মিত হলো শহীদ মিনার। জয় বাংলা চত্বরে নির্মিত পূর্বাচলের প্রথম শহীদ মিনার এটি।
শিশুতোষ প্রকাশনা ইকরিমিকরির উদ্যোগে রাজউকের অনুমোদনে এটি নির্মিত হয়। শহীদ মিনারের ডিজাইন করেন শিল্পী মাহবুবুল হক। উদ্যোক্তাদের মতে, এই শহীদ মিনার ঘিরে পূর্বাচল নতুন শহরের গড়ে তোলা হবে একটি সাংস্কৃতিক বলয়। যা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা এবং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বার্তা ছড়াবে।
স্টিল-পাত দিয়ে নির্মিত এই শহীদ মিনারে রয়েছে চারটি স্তম্ভ। দুটি স্তম্ভের অগ্রভাগ সংযুক্ত করা হবে অন্য দুটির সঙ্গে। সেই হিসাবে ওই দুটি স্তম্ভের মধ্যে একটির উচ্চতা ২১ ফুট, অন্যটি ৩১ ফুট। মিনারের বেদিতে করা হবে সুবিন্যস্ত ও নান্দনিক ফুলের বাগান। কিছু কাজ এখনো বাকি। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একুশের প্রভাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি জয় বাংলা চত্বরের চারপাশে শিল্পী, শিশু-কিশোর ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের বর্ণমালা আর আলপনা আঁকার মধ্যদিয়ে এই শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর, বীর প্রতীক।
এ প্রসঙ্গে কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, একুশ মানেই বাংলা। ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। আর একুশে ফেব্রুয়ারি হলো বাংলা ও বাঙালির আবেগ। যা মিশে আছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের রক্তধারায়। ভাষার মাসে কেএসআরএম জাতির ওই আবেগে মিশে থাকতে চায় শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইকরিমিকরির পাশে থেকে।
তিনি আরও বলেন, ভাষার জন্য যেসব বীর জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতি আরো বেশি সমুজ্জ্বল হয় শহীদ মিনার নির্মাণের মাধ্যমে। আমরা চাই নতুন প্রজন্মের কাছে যেন আরো বেশি অর্থবহ ও তাৎপর্যময় হয় শহীদদের বীরত্বগাঁথা। পাশাপাশি বিনম্র শ্রদ্ধা সেসব বীরের প্রতি, যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে মাতৃভাষা বাংলা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
পূর্বাচলে শহীদ মিনার নির্মাণে কেএসআরএমের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম বলেন, কেএসআরএম ভাষা শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মায়ের ভাষা রক্ষায় জীবন বিসর্জনকারীদের স্মৃতি সংরক্ষণের যে তাগিদ অনুভব করেছে কেএসআরএম, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে।
উদ্যোক্তা শিশুতোষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইকরিমিকরির নির্বাহী সম্পাদক কাকলী প্রধান আয়োজন সম্পর্কে বলেন, প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় বর্ণমালা অনেক আদরে-যতনে লালন করা। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অন্যতম উপায়। সে লক্ষ্যেই পূর্বাচলের জয় বাংলা চত্বরে ইকরিমিকরির উদ্যোগে কেএসআরএম ও সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর সবার অংশগ্রহণে নিয়মিতভাবে বর্ণমালা উৎসব আয়োজিত হবে এই শহীদ মিনার চত্বরে। এটি হবে সার্বজনীন। আমরা এই শহীদ মিনার ঘিরে পূর্বাচল নতুন শহরে গড়ে তুলতে চাই একটি সাংস্কৃতিক বলয়। যেখানে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্ত্বার চর্চা হবে।