২৯ বছরেও বিচার না হওয়ায় আক্ষেপ ইঞ্জি. মোশাররফের

ফটিকছড়িতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রমণের শিকার হওয়া এবং চোখের সামনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার গত ২৯ বছরেও না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

- Advertisement -

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার যাদের গাফেলতির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে তাদের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

- Advertisement -google news follower

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ মোশাররফ হোসেন ওই মামলার এক নম্বর আসামি নাছিরসহ সব আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।

মোশাররফের ওপর হামলার নেতৃত্বদাতা নাছির উদ্দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার এবং একসময়ের পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাস এলাকা থেকে নাছিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর গত ২৩ বছর ধরে নাছির কারাগারে আছেন।

- Advertisement -islamibank

নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় খুন, গুমসহ প্রায় ৩৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। সাক্ষীর অভাবে কয়েকটি মামলা থেকে খালাসের তথ্যও বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে এসেছে। মোশাররফের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মামলায় মোট ২৬ আসামির মধ্যে নাছির এক নম্বর আসামি।

গত ১ মার্চ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় সাক্ষী না আসায় ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা বিলম্বিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মোশাররফ।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ মে ওই মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন মোশাররফ হোসেন। সেদিন নিহত রাজনৈতিক সহকর্মীদের চোখের সামনে হত্যার বর্ণনা দিয়ে তিনি আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ মোশাররফ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘৮ মে, ১৯৯২ সাল। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। জামায়াত-শিবির তাদের লালিত-পালিত। ঘটনা আমার নিজের চোখে দেখা। আমি ফটিকছড়ি গিয়েছিলাম ছাত্রলীগের সম্মেলনে। আমার সঙ্গে প্রয়াত নেতা ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারও ছিলেন।

সম্মেলন চলছিল, দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ শিবিরের একটি সশস্ত্র বাহিনী ট্রাকে-বাসে এসে আক্রমণ চালায়। সেখানে আমাদের ছাত্রলীগ কর্মী জমির উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। চারদিকে ছোটাছুটি শুরু হলে আমি এবং রফিকুল আনোয়ার পাশ্ববর্তী স্কুলের অফিসে আশ্রয় নিই। দেখলাম, পুলিশের সামনে দিয়ে ট্রাকে-বাসে করে অস্ত্র হাতে নিয়ে শিবিরের সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ কিছুই করেনি। অথচ তারা যদি আক্রমণ করত সন্ত্রাসীরা পালাতে পারত না। সম্মেলন পণ্ড হয়ে গেল। আমরা জমিরের জানাজা পড়ে শহরের উদ্দেশে রওনা দিই। আমি ভেবেছিলাম, হাটহাজারী হয়ে গেলে আমাদের ওপর শিবিরের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করতে পারে। তখন রুট পরিবর্তন করি। ফটিকছড়ির নানুপুরে গেলাম।

সেখান থেকে মোহাম্মদ ত্বকীর হাট হয়ে রাউজান দিয়ে শহরে যাব ঠিক করলাম। নানুপুরে আমাদের দলের লোকজনের সঙ্গে দেখা হলো। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে গাড়িতে উঠলাম। সামনে সিটে বসালাম আমাদের দলের নেতা হারুন বশরকে। সম্মেলনের কয়েকদিন শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলায় হারুন বশর পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। আমি তাকে সামনের সিটে বসালাম।’

নৃশংস হামলার বয়ানে মোশাররফ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমরা মোহাম্মদ ত্বকীর হাটে পৌঁছালাম। হঠাৎ চারদিক থেকে একই পোশাক পরা ২০-২৫ জন সশস্ত্র লোক এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। এক মিনিটের মধ্যে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে বললাম, আমি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তোমরা কি চাও?

হারুন বশরকে গাড়ি থেকে বের করে চাকার ওপর বসাল। ব্রাশফায়ার করার মুহুর্তে আমি সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি বললাম, সে একজন পঙ্গু মানুষ, তাকে ছেড়ে দাও। ডোন্ট কিল হিম, ইফ ইউ ওয়ান্ট কিল মি। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ব্রাশফায়ার করে হারুন বশরকে খুন করল।’

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এরপর আমার মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে নাছির বলল, “আঁরে চিনি ল, আর নাম নাছির।” আমার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হলো। রাইফেলের বাট দিয়ে আমাকে বেদম মারধর করল। তখন আমার গাড়ির পেছন থেকে তখনকার ছাত্রলীগ নেতা জসীম উদ্দিন শাহ, ইউনূস গণি, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ বের হয়ে আসল।

সন্ত্রাসীরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধর, ধর বলে তাদের ধাওয়া শুরু করল। এই সুযোগে আমি পাশের একটি খালে লাফ দিই। সেখানে পাটিপাতা ছিল, এর ভেতরে আমি শুয়ে থাকি। সন্ত্রাসীরা আবার ফিরে এসে এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার শুরু করল। কিন্তু অন্ধকারে তারা আমাকে দেখতে পায়নি। আমাকে না পেয়ে চলে গেল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে খালপাড় থেকে কিছুদূর গেলাম। হেঁটে স্থানীয় আবদুল্লাহপুর বাজারে পৌঁছলাম।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনা এখানে যা বললাম, হুবহু আদালতে আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। জজ সাহেবের সামনে বলেছি। আমি নাছিরকে কাঠগড়ায় শনাক্ত করেছি। এটা আমার চোখে দেখা। আমার চোখের সামনে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। নাছিরকে তো অবশ্যই ফাঁসি দেওয়া উচত। সে এক নম্বর আসামি। সাক্ষীর অভাবে বিচার হচ্ছে না, এটা ভুল বক্তব্য। আমি নিজে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমার গাড়িচালক ইদ্রিস, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ তো এখনও আছে। প্রয়োজনে আদালতে তাদের জিজ্ঞেস করা হোক।’

তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন, প্রয়োজনে আবার সাক্ষ্য দিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু বিচার যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়, দোষীকে যেন শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় যে বা যারা দোষী, তাদের যেন আইনানুগভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’

রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিচার বিলম্বিত হলে বিচার পাওয়া না পাওয়া সমান কথা হয়ে যায়। আমি মনে করি, কারও না কারও গাফিলতির কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। যার কারণে হচ্ছে তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

সংবাদ সম্মেলনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সহসভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত ও জসীম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, সদস্য বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার এবং মহিলা লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।

জয়নিউজ/এসআই
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM