রাষ্ট্রবিরোধী ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা এবং রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইল ফোনে পর্ন ভিডিও পেয়েছে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, আটকের পর রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইল ফোন চেক করে একাধিক পর্ন ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়া আসমা নামে এক মেয়েকে দুই বছর আগে গোপনে বিয়েও করেছিলেন তিনি। তার এই বিয়ের কথা দুই পরিবারের কেউ জানতো না। মাদানীর মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন জনকে পাঠানো আপত্তিকর ছবিও পাওয়া গেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ইসলাম মাদানীর ফোনে অনেক কিছু পাওয়া গেছে। আমরা এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বুধবার (৭ মার্চ) ভোরে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দার নিজ বাড়ি থেকে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির তদন্তভার র্যাবে রাখতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মানি, যদি সে ইসলাম মানে। প্রধানমন্ত্রী মানি, যদি সে ইসলাম মানে। এই কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না যদি সে ইসলামের বিরুদ্ধে যায়।’
ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই বক্তব্যসহ আরও অনেক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার হলে সরকারের ভেতরে এবং বাইরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটকের পরপরই তার মোবাইল ফোন চেক করে দেখে র্যাব। এসময় তার মোবাইলে একাধিক পর্ন ভিডিও পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের শেষের দিকে মাদানী তার ভাবী পারভীন আক্তারের চাচাতো বোনকে গোপনে কলেমা পড়ে বিয়ে করেন। তাদের এই বিয়ের কোনও কাবিননামা রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। এমনকি ভাবী পারভিন ছাড়া দু পরিবারের কেউই এই বিয়ের কথাও জানতেন না।
গত মঙ্গলবার রফিকুল ইসলাম মাদানী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিয়ের জন্য ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ফুলপুরের রহিমগঞ্জে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসমাদের বাড়িতে যান। কিন্তু আসমার পরিবারের সদস্যরা রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা জানান, রফিকুল ইসলাম মাদানীরা পাঁচ ভাই। রফিকুল সবার ছোট। তার বাবার নাম মৃত শাহাবুদ্দিন। মাদানী নেত্রকোনার মালনী এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকার বারিধারার জামিয়া মাদানীয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। খর্বাকৃতির শারীরিক গঠন হলেও রফিকুলের বয়স প্রায় ২৬-২৭ বছর। খর্বাকৃতির কারণে রফিকুল ইসলাম মাদানী ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
‘জোশের কারণে হুঁশ ছিল না’
আটকের পর রফিকুল ইসলামকে রাষ্ট্রবিরোধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, যখন বক্তব্য দেওয়ার জন্য কোনও মঞ্চে ওঠেন তখন জোশের কারণে হুঁশ থাকে না। এ জন্য অনেক কিছুই বলে ফেলেছেন বলে তিনি দাবি করেন। আটকের পর তিনি ভবিষ্যতে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সচেতন থাকবেন বলে আকুতিও জানান।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করেছিল পুলিশ। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।