অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাতটি ওয়ানডে জিতলেও সিরিজ জিততে পারেনি টাইগাররা। এবার বিশ্বকাপ সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজেই লঙ্কানদের হারিয়ে দিল তামিম বাহিনী।
প্রথম ম্যাচে ২৫৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমানদের বোলিংয়ে এসেছিল ৩৩ রানের জয়। আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিকুর রহীমের সেঞ্চুরিতে ভর করে স্কোরবোর্ডে দাঁড়ায় ২৪৬ রানের সংগ্রহ। যেখানে মুশফিকের একার সংগ্রহই ১২৫ রান।
আগেরদিনের চেয়ে ১১ রান কম করলেও, আজকের জয় আরও বড় ব্যবধানে। শেষ মুহূর্তে বৃষ্টি বাগড়া দিলেও ডিএল মেথডে টাইগারদের জয় এল ১০৩ রানে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফের উজ্জ্বল মিরাজ-মোস্তাফিজরা। তাদের বোলিং তোপে পরিবর্তিত লক্ষ্য নির্ধারিত ৪০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রানে থেমে গেছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশ পেয়েছে ১০৩ রানের বিশাল জয়।
এ জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচ সিরিজের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। আগামী শুক্রবার শেষ ম্যাচটিতে থাকবে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নবম সিরিজ খেলতে নেমে প্রথমবার জিতল বাংলাদেশ। আগের ৮ সিরিজে ছয়টি জিতেছিল লঙ্কানরা, ড্র হয় বাকি দুইটি।
শুধু লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ জেতাই নয়, দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলেও শীর্ষে উঠে গেল বাংলাদেশ। যেখানে ৮ ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫০ পয়েন্ট। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে ৪০টি করে পয়েন্ট। শেষ ম্যাচ জিতলে তাদের সঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের করা ২৪৬ রানের জবাবে শুরু থেকে একবারের জন্যও ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। বোলিং ইনিংসের শুরু থেকেই সফরকারীদের চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই দুই অঙ্কে পৌঁছলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা। এছাড়া পাথুম নিসাঙ্কা ২০, আশেন বান্দারা ১৫, কুশল পেরেরা ১৪, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ১০ ও দাসুন শানাকা করেন ১১ রান। তাদের সর্বোচ্চ রানের জুটিটি হয় দ্বিতীয় উইকেটে। যেখানে ২৯ রান যোগ করেন নিসাঙ্কা ও গুনাথিলাকা।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। মিরাজের ঝুলিতেও গেছে ৩ উইকেট। সাকিব ২ ও শরিফুল ১ উইকেট দখল করেছেন।
এর আগে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। ইনিংসের প্রথম ওভারে ৩টি চারে ১৩ রান করা আক্রমণাত্মক তামিম দ্বিতীয় ওভারে আসা দুশমন্থ চামিরার প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে পড়েন। একই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন সাকিবও।
তামিম-সাকিবের দ্রুত বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন লিটন দাস। তবে ১২তম ওভারে এসে ধৈর্য হারান এই ওপেনার। লক্ষণ সান্দাকানের সাধারণ মানের বলটি শর্টে ফিল্ডিং করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে তুলে দেন। ৪২ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেছেন লিটন।
লিটন বিদায় নেওয়ার পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মোসাদ্দেক। সান্দাকানের বলে লেগ সাইডে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশল পেরেরার তালুবন্দি হন মোসাদ্দেক (১০)। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৮৭ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ৫৮ বলে ব্যক্তিগত ৪১ রানে স্কুপ করতে গিয়ে সান্দাকানের শিকার হন তিনি। ব্যাটিংয়ে থাকা মুশফিক অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরির দেখা পান।
রিয়াদের বিদায়ের পর আরও একবার বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ওভারের ব্যবধানে বিদায় নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব (১০) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (০)। এমন চাপের মাঝে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মুশফিক। ধীরেসুস্থে ১১৪ বল খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৪ রান।
ইনিংসের শেষদিকে বৃষ্টি হানায় বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। ফের খেলা শুরুর পর মুশফিক সেঞ্চুরি পেলেও টেল এন্ডারদের কেউই তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। এর মধ্যে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও মেন্ডিসের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে বিদায় নেন। ৩০ বল খেলে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। সাইফউদ্দিন পরে আর বোলিংয়ে নামতে পারেননি। তার বদলে কনকাশন সাব হিসেবে নামেন মূল একাদশের বাইরে থাকা তাসকিন আহমেদ।
মুশফিক সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর কিছুটা আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। সেঞ্চুরির আগে তিনি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন ৬টি, পরে আরও ৪টি। ৪৮তম ওভারে শরিফুল (০) বিদায় নেন। এর পরের ওভারের প্রথম বলেই অফ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বান্দারার হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় মুশফিকের ১২৭ বলে ১২৫ রানের লড়াকু ইনিংস।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার চামিরা ও সান্দাকান ৩টি করে, উদানা ২টি এবং হাসারাঙ্গা ১টি উইকেট নিয়েছেন।
ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন
মুশফিকুর রহিম।