চন্দনাইশে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে এক দম্পতিকে আটকে রেখে বিভৎস নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তবে নির্যাতনের পর থানায় গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারটির।
সোমবার (১৬ জুন) চন্দনাইশে মোহাম্মদপুর এলাকায় হামিদা আক্তার (৪২) ও আবদুল হাকিম (৬০) নামে ওই দম্পতির ওপর চাচাতো ভাই ও তার স্ত্রীসহ ৪ জন মিলে এ নির্যাতন চালায় ।
হামিদা আক্তারের ছোট বোন নাজমুন আক্তার জানান, আমাদের বাড়ি চন্দনাইশের মোহাম্মদপুর কাজী বাড়ি। গত ১১ জুন আমার আপন চাচী অসুস্থ হলে আমরা সবাই সেখানে যাই। তাকে দেখে আমরা সেই দিনই চলে আসি। পরের দিন অর্থাৎ ১২ জুন আমার চাচী মারা যায়। সেই দিন আমার বোন হামিদা আর তার স্বামী সেখানে যাই। পরে তারা দাফন শেষ করে চলে আসে। এদিকে আমার চাচাত ভাইয়ে বৌয়ের স্বর্ণ হারিয়ে যায় । তখন সন্দেহ করা হয় আমার মেঝো বোন হামিদাকে।
সোমবার (১৪ জুন) আমার চাচাতো ভাই কে এম ইলিয়াস মিয়া ফিরোজ এবং তার বৌ রীপা খান আমার বোনের মির্জাপুলের বাসায় আসে। তারা এসময় বলে বাড়িতে অনেক কাজ তোমাদের যেতে হবে। তখন তারা দুই জনকে আমাদের বাড়ি চন্দনাইশের বাড়িতে নিয়ে যান। ১৬ তারিখ আমার চাচাত ভাই ইলিয়াজ মিয়া ফিরোজ, ভাবী রীপা খান, দূরসম্পর্কের ভাইপো মিজানুর রহমান, চাচতো ভাই গোলাম আজাদ এ চারজন মিলে শুরু করেন নির্যাতন। প্রথমে তাদেরকে ইলেকট্রিকের পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। এসময় তাদেরকে নাকি দুটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। তারপর আমার বোনকে সিগেরেটের মতো কি জেনো খাইয়ে দেওয়া হয়। তখন আমার বোন বমি করেতে শুরু করে। তখন আমার বোনকে মারতে মারতে করা হয় স্বর্ণগুলো কোথায় রেখিছিস। তখন সে মার থেকে বাচার জন্য তাদের বলে আমি স্বর্ণ মির্জাপুলের বাসায় রেখেছি। তখন তারা সেখান থেকে আবার মির্জাপুলের বাসায় গিয়ে আলমারি ভেঙ্গে সেখানেও কিছু খুঁজে পায় না। পরে আমাকেও সন্দহ করা হয়। আমি তাদেরকে আমার বাসায়ও এসে সার্চ করতে বললাম।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরে আমার এক ভাই চন্দনাইশ থানায় মামলা করতে গেলে চন্দনাইশ থানার ওসি মামলা না নিয়ে চলে যান।
জয়নিউজের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় নির্যাতিতা হামিদা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, আমাকে তারা অনেক মারছে। মারতে মারতে তারা আমাকে গোলাপি রঙের কি যেনো ওষধ খাইয়ে দেয়। তারপর আমাকে সিগেরেটের মতো কি একটা খাওয়ালো। এটা খাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই। এসময় তিনি তার উপর হওয়া অত্যাচারের সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
আহত হামিদা আক্তারের ছোট বোন ফারজানা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, একজন মানুষকে চোরের অপবাদ দিয়ে এভাবে কিভাবে মারতে পারে। আমার আপু বার বার বলছে তিনি চুরি করেনি। তারপরও তাকে এভাবে মারা হয়েছে। আমাদের পরিবার এর বিচার চাই।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নির্যাতনে অভিযুক্ত কে এম ইলিয়াজ মিয়া ফিরোজ জয়নিউজকে বলেন, এটা একটা বানোয়াট মিথ্যা কথা। আমার মায়ের দাফনের পর বিভিন্ন সূত্র ধরে আমরা বুঝতে পারি হামিদা চুরি করেছে। যেহেতু ওই মহিলা নেশাগ্রস্ত আমি তার পরিবারকে জানিয়েছি। তার ছোটভাই টিপু তাকে মেরেছে। সবাই দেখেছে। উল্টো তাকে সেভ করতে গিয়ে আমি হাতে ব্যথা পেয়েছি। আমরা কাছে প্রমাণও আছে।
২নং জোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দম্পতিকে নির্যাতনের বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমি ছবি দেখেছি। শুনেছি নির্যাতিতা একটু অসংলগ্নভাবে কথাবার্তা বলেন। তবুও চুরির অপবাদ দিয়ে কেউ এভাবে মারতে পারে না।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরকার জয়নিউজকে বলেন, মামলা না নেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা। এবিষয়ে কেউ তো লিখিত অভিযোগই করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়নিউজ/পিডি