দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোতে বেড়ে চলছে করোনা রোগীর সংখ্যা, একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
এ পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার (২৮ জুন) থেকে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম তিন দিন কিছুটা শিথিল থাকলেও বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।
এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউনকে সফল করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। চলতি বছরের বিভিন্ন সময় ঘোষিত কয়েক দফা বিধিনিষেধের মতো এবার শিথিলতা দেখাবে না পুলিশ। এতদিন বিধিনিষেধের মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে মুভমেন্ট পাস নিয়ে কড়াকড়ি ছাড়া তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তবে এবারের লকডাউনে পুলিশ হার্ডলাইনে থাকবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে আরোপ করা বিধিনিষেধের সময় হার্ডলাইনে না গিয়ে জনগণকে সচেতন করার কাজ করেছে পুলিশ। বিধিনিষেধের সময় গণপরিবহন ও শপিংমল চালু রাখা এবং ঈদযাত্রা থাকায় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে হার্ডলাইনে যেতে পারেনি পুলিশ। তবে মুভমেন্ট পাস ও চেক পোস্টের মাধ্যমে বিধিনিষেধকে কার্যকর করার প্রচেষ্টা ছিল পুলিশের।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার ভারতীয় ডেল্টা ধরন সারা দেশে ছড়াচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, তাই এবারের লকডাউনে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দেশব্যাপী পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে ইতোমধ্যে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে প্রস্তুত থাকার জন্য। লকডাউনের প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার পরপরই মাঠ পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রম দৃশ্যমান হব।
লকডাউন বাস্তবায়নে যেভাবে মাঠে থাকবে পুলিশ
পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, লকডাউনের প্রজ্ঞাপন এখনো জারি না হওয়ায় ঠিক কীভাবে পুলিশ মাঠে থাকবে তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হচ্ছে না। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে আসন্ন লকডাউনে পুলিশ কীভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে এ বিষয়ে বাহিনীটির উচ্চ পর্যায়ে বেশ কিছু আলোচনা ও কর্মপন্থা ঠিক হয়েছে। আগের বিধিনিষেধের মতো দেশব্যাপী বিভিন্ন চেকপোস্ট বসাবে পুলিশ।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ রাস্তায় বের হতে না পারে তা চেকপোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে পুলিশ। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে ছাড় না দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাস্তায় চেকপোস্ট ছাড়াও সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল থাকবে। এছাড়া জরুরি কাজে বের হলেও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বের হতে হবে, নাহলে পুলিশি ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।
এছাড়া ডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, জরুরি সেবা, সীমিত পরিসরে যেসব অফিস খোলা রাখার কথা রয়েছে তা ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান খুললেই আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। নিষেধাজ্ঞা না মানলে বল প্রয়োগ করতেও পুলিশ পিছ পা হবে না। প্রাথমিকভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কঠোর কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বাহিনীটি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এবারের লকডাউন হবে সর্বাত্মক। কাউকেই বিন্দুমাত্র সুযোগ দেওয়া হবে না নিয়ম ভঙ্গের। লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে আমাদের কাছে ইতোমধ্যে মৌখিক নির্দেশনা এসেছে। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অফিসিয়াল নির্দেশ চলে আসবে আমাদের কাছে। এরপর থেকেই মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হবে।
ঢাকা জেলা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, এবার নির্দেশনা হার্ডলাইনে থাকার। লকডাউনকে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগেরও নির্দেশনা রয়েছে। তবে হার্ডলাইনের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রমও পুলিশ চালিয়ে যাবে।
সোমবার থেকে লাগবে মুভমেন্ট পাস
সোমবার (২৮ জুন) শুরু হওয়া লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হবেন তাদের অবশ্যই মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। সড়কে চেকপোস্ট দিয়ে মুভমেন্ট পাস তল্লাশি করবে পুলিশ।
পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সেই প্রজ্ঞাপনে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে বাংলাদেশ পুলিশ। লকডাউনে এবারও আগের মতোই মুভমেন্ট পাস নিতে হবে।
থাকতে পারে সেনাবাহিনী
এদিকে রোববার (২৭ জুন) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, সামনে যে লকডাউন, সেখানে পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এবার থাকবে। যাতে লকডাউন কার্যকরভাবে পালিত হয় এবং ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধ হয়, মৃত্যুর সংখ্যা যাতে অনেক কমিয়ে আনতে পারি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলো অলরেডি অকুপাইড হয়ে গেছে, মানে রোগী ফিলআপ হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।