কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে মাতামুহুরী নদীর পানি ঢুকে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এতে উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ গত তিনদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইভাবে বিদ্যুৎ বিছিন্ন পুরো এলাকা। বন্যা কবলিত এলাকায় নলকূপগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পুরো উপজেলায় ৫০ গ্রামের লাখো মানুষ এখন পানিবন্ধি।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় শুকানো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে শিলখালী ও বরাবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ে বসবাসকারী বেশকিছু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকায় বেড়িবাঁধের দু’পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়ায় পূর্ব মেহেরেনামা মোরার পাড়া, বাজার পাড়া, সৈকত পাড়া, নন্দীর পাড়া, হরিণাফাঁড়ী, চৈরভাঙ্গা, চড়া পাড়া, তেলিয়াকাটা, সাবেক গুলদি, সরকারী ঘোনা, নতুন বাগুবাজার, সাকুতলাসহ আরোবেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শিলখালী ইউনিয়নের পেঠান মাতবরপাড়া, হাজিরঘোনা, দোকানপাড়াসহ প্রায়য় ৮ থেকে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। বন্যা কবলিত এসব গ্রামের লোকজনকে ত্রান দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উজানটিয়া ইউনিয়নের গোদারপাড়া ষ্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে একটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনিয়েনের সুতাচোরা, গোদারপাড়া, নুরীর পাড়া, রুপালীবাজার পাড়া, দক্ষিন সুতাচুরা, মালেকপাড়া, ঠান্ডার পাড়া, আতর আলী পাড়াসহ বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শহিদুল ইসলাম ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ইউনিয়নের গুদারপাড়া গ্রামে এলাকায় পাউবোর ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কিছু মেরামত করছি। এতে করে সামান্য জোয়ারের পানি ঠেকানো যাবে মাত্র। তাই বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে মেরামত করতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব ইউনিয়নের ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে গেছে। অসংখ্য পুকুর, চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল ও বীজতলার ক্ষতি হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ও পড়েছেন চরম বিপাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলার দায়িত্বে থাকা সেকশন অফিসার (এসও) প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি গত কয়েকদিন ধরে পেকুয়ার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। মগনামায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় এবার সেখানে কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি। সদর ইউনিয়নের কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়নি। বন্যার পানি লোকালয় থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য স্থানীয়রা পূর্ব মেহেরনামা এলাকার দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ কেটে দিয়েছেন।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতাছেম বিল্লাহ জানান, গত টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পেকুয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শুকানো খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বারবাকিয়া ও শিলখালীর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বেশকিছু পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জয়নিউজ/গিয়াস/পিডি