রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ার পর বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, বরং সম্পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছে। তালেবানের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আফগানিস্তানে ক্ষমতার সম্পূর্ণ হস্তান্তর চায়।
রোববার (১৫ আগস্ট) তালেবানের দু’জন কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আফগানিস্তানে কোনও ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে না। তারা আফগানিস্তানের ক্ষমতার পূর্ণ হস্তান্তর প্রত্যাশা করছে।
এর আগে তালেবানের অভিযানের মুখে রোববার সন্ধ্যার দিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি প্রতিবেশি তাজিকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাজিকিস্তানে চলে গেছেন।
তবে নিরাপত্তার কারণে আশরাফ গনি কোথায় যাচ্ছেন সে ব্যাপারে যেকোনও ধরনের তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
আশরাফ গনির পাশাপাশি আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। তবে আফগান এই ভাইস প্রেসিডেন্ট কোন দেশের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কোনও তথ্য জানা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর দুই দশকের যুদ্ধ শেষে আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে যাচ্ছে তালেবানের। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার প্রাণঘাতি হামলার জবাবে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো।
দুই দশকের যুদ্ধ শেষে দেশটি থেকে পশ্চিমা সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ক্ষমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তালেবান। মাত্র ১০ দিনের তড়িৎগতির অভিযানে দেশের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ২৮টির রাজধানীর দখল নেওয়ার পর রোববার কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই কাবুলে পৌঁছায় তালেবান।
দেশটির বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী ক্ষমতার পূর্ণ হস্তান্তরের দাবি তুললেও আফগান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মিরজাকাওয়াল বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
রোববার সকালের দিকে কাবুলের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে; যখন তালেবানের যোদ্ধারা রাজধানী এই শহরের প্রত্যেকটি প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তা ও জানমালের ক্ষতি বিবেচনায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে আফগান সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় তালেবান।
তারা বলেছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে অতীতের কট্টর ইসলামি বিধি-বিধান শিথিল করার অঙ্গীকার করেছে তালেবান। তালেবানের মধ্যস্থতাকারী সুহাইল শাহিন আফগানিস্তানে বিবিসির প্রতিনিধি ইয়ালদা হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালেবানের শাসনাধীনে কাবুলের জনগণের জীবন নিরাপদ থাকবে বলে তাদের দেওয়া আশ্বাস বিবিসিতে প্রচারের অনুরোধ জানান।
সুহাইল শাহিন বলেন, আমরা আফগানিস্তানের জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে, তাদের সম্পত্তি এবং জীবন নিরাপদ। কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। আমরা জনগণ এবং এই দেশের সেবক।
এদিকে রোববার তালেবানের সদস্যরা রাজধানীতে ঢুকে পড়ায় বিদেশি কূটনীতিক এবং অনেক স্থানীয় বাসিন্দা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।