দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের করোনাকালে বেহাল দশা নিয়ে ফের জাতীয় সংসদে তোপের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কার্যক্রমের সমালোচনা করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা।
জবাবে এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হয়েই সংসদে এসেছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আই লাইক ক্রিটিসিজম।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বেশ কটি বিলের জনমত যাচাই ও সংশোধনী বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য পীর ফজলুল রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটার অবসান হওয়া উচিত। প্রবাসীদের কল্যাণে প্রতিটি বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে ঘেরাও করার পর ৭টি কোম্পানিকে ল্যাব স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে পারেন না?
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, করোনাকালে ৩০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু কোথায় সে লোক? আমরা তো সেটা দেখতে পাই না। কেনাকাটায় অনেক মজা। তাই করোনাকালে কোটি কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে সত্য। কিন্তু পর্দা কেনা হয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। করোনার আগে প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যায়। দেশের চিকিৎসা খাতের যদি উন্নয়ন হতো, তাহলে কেন এত মানুষ ভারত যায়?
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মজিবুল হক চুন্নু বলেন, এমন সব যন্ত্র কেনা হয়, কিন্তু কোন কাজে লাগে না। টেকনেশিয়ান নেই। তাহলে কেন কোটি কোটি টাকায় কেনাকাটা করা হয়। সব কিছুতে প্রধানমন্ত্রী কী করেছেন, সেটা কেন বলা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে কি করেছেন, সেটা বলেন। মন্ত্রী হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী?
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, যেসব সমালোচনা করা হয়, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কেন নেন? দেশের স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনা করেই এসব কথা বলা হয়।
বগুড়া ৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, করোনায় যদি কোনো সাফল্য থাকে, সেটা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক পলিসির কারণে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকার দায়িত্ব দিয়েছে প্রতারকদের। তারা এটা নিয়ে নানা নৈরাজ্য করেছে। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা অনেক এনার্জি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন, আপনারা চালিয়ে যান, আমিও চালিয়ে যাব। তবে সমালোচনায় দমে না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সমুদ্রের মধ্যে দুই বালতি ময়লা ফেললে সমুদ্রের পানি নষ্ট হয়ে যাবে না। মহাত্মা গান্ধি বলেছেন, সত্য সত্যই থাকবে, যতই চিৎকার করে বলা হোক না কেন, মিথ্যা সত্য হয়ে যাবে না।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আপনারা কী বলতে পারেন, তাই প্রস্তুত হয়ে এসেছি। বিএনপির সময়ের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় ১০টি আইসিইউ এবং ১০টি ডায়ালাইসিস ইউনিট হবে। বর্তমান সময়ে নতুন ২৩টি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। নতুন করে ৫ হাজার মেডিকেল সিট বেড়েছে। দেড় লাখ মেডিকেল হাসপাতালে বেড বেড়েছে। ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল আগে, বিএনপি এসে সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। স্বাস্থ্যখাতের জন্য বিএনপি আমলে কোন পুরস্কার পায়নি বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার এমডিজি, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, ভ্যাকসিন হিরোর পুরস্কার পেয়েছে। বিএনপি ৫ বার দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জবাবে রুমিন ফারহানা বলছেন, তাকে আজকে অনেক খুশি দেখা গেছে। তার পরিসংখ্যানগুলো গাঁজাখুরি কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। দেশে দুর্নীতির সূচনা হয়েছে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগের সময়। বিএনপি সে সূচক কমিয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সমালোচনার কারণে আজ সংসদ ভালো জমেছে। আপনারা কথা বলবেন, আমরাও উত্তর দেব।
জয়নিউজ/পিডি