করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়াদের ৬২.৩৩ শতাংশের দেহে এবং উভয় ডোজ নেওয়াদের ৯৯.১৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর যারা টিকা নেননি তাদের ৫০ শতাংশের দেহে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট সম্প্রতি সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিভাসু থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে একদল গবেষক করোনার অ্যান্টিবডির ব্যাপকতা ও পরিমাণ নির্ণয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টিকা নেননি তাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি (ওমএ) তৈরি হয়েছে (গড়ে ৫৩.৭১ ডিইউ/মিলি), এর চেয়ে গড়ে প্রায় তিন গুণ বেশি অ্যান্টিবডি (১৫৯.০৮ ডিইউ/মিলি) তৈরি হয়েছে যারা টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন। আর প্রায় পাঁচ গুণ অ্যান্টিবডি টাইটার (২৫৫.৪৬ ডিইউ/মিলি) পাওয়া গেছে যারা টিকার উভয় ডোজ নিয়েছেন।
সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণাটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, রোগীর স্বজন, আউটডোর ও ইনডোর রোগী (করোনাক্রান্ত নয় এমন), পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সার্স-কোভ-২ এর উপসর্গযুক্ত, উপসর্গহীন, প্রথম ডোজ টিকা প্রাপ্ত ও উভয় ডোজ টিকা প্রাপ্ত মোট ৭৪৬ জন ব্যক্তিদের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে।
এ সমীক্ষার মাধ্যমে সেরোপজিটিভিটি (রক্তে সার্স-কোভ-২ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সমীক্ষাটি ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ও পরিমাণ এনজাইম-লিংকড ইমিউনোসরবেন্ট অ্যাসের (ইএলআইএসএ) মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণকারী মোট ৭৪৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ (২২৩ জন) করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ও উভয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৩১ শতাংশ (২৩১ জন)। আর টিকা নেননি ৩৯.১৪ শতাংশ (২৯২ জন)।
গবেষকরা বলেন, জরিপে আরও দেখা গেছে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর প্রথম মাসে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার দেহে বিদ্যমান থাকে (১৭৫.১ ডিইউ/মিলি) দ্বিতীয় মাসে গিয়ে তার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর অ্যান্টিবডির পরিমাণ (গড়) সময়ের সঙ্গে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতায় ভিন্নতা দেখা যায়।
গবেষণায় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়াদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার দুই মাসের মধ্যে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার থাকে (৩২৪.৪২ ডিইউ/মিলি) চতুর্থ মাসে এসে তার প্রায় ২১ শতাংশ টাইটার হ্রাস পায়, কিন্তু ষষ্ঠ মাসে গিয়ে তা চতুর্থ মাসের মাত্র ৩.৪ শতাংশ হ্রাস পায়।
গবেষণা দলের প্রধান গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরেও করোনা সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি শরীরে উপস্থিত থাকে। এই গবেষণালব্ধ ফল করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা ও সফলতাকে আলোকপাত করে।
গবেষকরা বলেন, চলমান গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কত শতাংশে অ্যান্টিবডি (ওমএ) তৈরি হয়েছে তা তুলে ধরা।
এই গবেষক দলে রয়েছেন— ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী (প্রধান গবেষক), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. এম.এ.হাসান চৌধুরী (সহপ্রধান গবেষক), ডা. জাহান আরা (সহকারী গবেষক), ডা. সিরাজুল ইসলাম (সহকারী গবেষক), ডা. তারেক উল কাদের (সহকারী গবেষক), ডা. আনান দাশ (সহকারী গবেষক), ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (সহকারী গবেষক), ডা. ইয়াসির হাসিব (সহকারী গবেষক), ডা. তাজরিনা রহমান (সহকারী গবেষক) ও ইন্টার্ন ডা. সীমান্ত দাশ (সহকারী গবেষক)।