বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য আজ বুধবার (১০ অক্টোবর) এক ঐতিহাসিক দিন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। চৌদ্দ বছর আগে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে যে ন্যাক্কারজনক অধ্যায় শুরু হয়েছিল আজ তার বিচার হলো। বিচারের রায় নিয়ে জয়নিউজবিডি কথা বলেছে বিশিষ্টজনদের সাথে।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আদালতে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান,খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ সরকারি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিপক্ষকে শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, জীবনে শেষ করে দেয়ার এই প্রবণতা বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতির এক নগ্ন প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. অনুপম সেন বলেন, ২১ আগস্ট যা ঘটেছে সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। সবাই এটি প্রত্যক্ষ করেছে, এর বেদনা এখনো বহন করে চলেছে ওই হামলায় যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা। রাজনৈতিক বিরোধীদলের স্বপ্ন নিশ্ছিন্ন করে দিতে একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা করেছিল তারা। একটি দলকে এভাবে হত্যা চেষ্টার ঘটনা বিশ্বে আর নেই। আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা। তবে এটুকু বলতে চাই এই ঘটনা রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি একটি অভূতপূর্ব রায়।
২০১৪ সালে বিএনপি তখন ক্ষমতায় ছিল আর শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। কিন্তু বিএনপি সরকার তখন ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত না করে উলটে আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে। বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে বলবো, এ রায়ে প্রত্যাশা পূরণের সাথে সাথে কিছু অপূণর্তাও রয়েছে। আমি আশা করেছিলাম এই অপরাধের সাথে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেয়া হবে।
বাংলাদেশে প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রকাশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ঘটেছে। প্রতিহিংসার এই রাজনীতির বড় শিকার বিরোধীদল। দেশ স্বাধীনের পর সেই ধারা বাংলাদেশে চলছে। রাজনীতির পক্ষ-প্রতিপক্ষ মাঠ ছাপিয়ে যখন প্রতিপক্ষকে সশস্ত্রপন্থায় নির্মুল করেন রাজনীতিতে তখন বিশ্বাস ও আস্থা থাকে না। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে মৌলবাদী শক্তির উথান হয়েছিল, সেই বলয় থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় বড় ভূমিকা রাখে। আজকের এ রায় সেই অগ্রযাত্রায় দেশকে আরো অনেকখানি এগিয়ে দেবে। আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হল।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এটি ঐতিহাসিক রায়। যা একটি মাইলফলকও বটে। আশা করি, আইনগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে রায় দ্রুত কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।