জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে বিপিসি

বিশ্ববাজারে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যবহারে শীর্ষে থাকা ডিজেলের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

- Advertisement -

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) একজন কর্মকর্তা প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

- Advertisement -google news follower

এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বেশ কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব সভায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে লোকসানে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সব পক্ষই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে।’

সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয় করতে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসে তাহলে তা বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে তিনটি বৈঠক করা হয়েছে।

- Advertisement -islamibank

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তেলের দামে সমন্বয় করতে হবে।’

তিনি জানান, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়ায় এখন দৈনিক ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। যা মাসে ৬০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

বিপিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত ২০ অক্টোবর প্লাটসের দর অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৯৫ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। যা গত ৭/৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্ববাজারে ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারের মধ্যে থাকলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৬৫ টাকা লিটার ডিজেল বিক্রি করলে আয়-ব্যয়ে সমান থাকা যায়। এর চেয়ে কম হলে লাভ হয়। আর এর চেয়ে বেশি হলে লোকসান গুনতে হয়। গত তিন মাস থেকে বিপিসি ব্যাপক লোকসান করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এখন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করার কাজ চলছে। শিগগির এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশে ৪০ লাখ টন ডিজেল ও এক লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করতে হয়। আর দেশে অকটেনের সমপরিমাণ পেট্রোল উৎপাদন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে যখন ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা নির্দারণ করা হয়েছিল, ওইসময় বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ মার্কিন ডলার। তবে বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম গত মাসে ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়, তার ৭৩ শতাংশের বেশি ডিজেল। সড়ক ও নৌ পরিবহণ, কৃষির সেচ পাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে।

বিপিসির হিসাবে, ২০১৯-২০২০ বছরে বিপিসি ৫৫ লাখ ৩ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে। এরমধ্যে ডিজেলের পরিমাণ ৪০ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন।

এরই মধ্যে ২০২২ সালের চাহিদা মেটাতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।

জয়নিউজ/এসআই
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM