অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে অভিনেত্রীর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মরদেহের বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে বাঁধা ছিল একই সুতার বান্ডিল পাওয়া যায় অভিনেত্রীর স্বামীর গাড়িতে। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় হত্যার আদ্যোপান্ত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা-৮টার মধ্যে শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন নোবেল। পরে মুঠোফোনে তার বন্ধু ফরহাদকে ডেকে বাসায় আনেন। চূড়ান্ত হয় গুমের সিদ্ধান্ত। পরিকল্পনামাফিক নোবেল আগে থেকে বস্তা, প্লাস্টিকের সুতা এনে বাসায় রাখেন। হত্যার পর স্ত্রী শিমুর মরদেহ লম্বালম্বি দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাস্তা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান নোবেল ও তার বন্ধু।
প্রথমে মরদেহটি মিরপুরের কোন এলাকায় গুমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে উপযুক্ত জায়গা না মেলায় তারা মরদেহসহ গ্রিন রোডের বাসায় ফিরে আসেন। এরপর এদিন সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাস্থ কদমতলী এলাকায় একটি ঝোপে মরদেহটি ফেলে আসেন তারা।
সূত্র জানায়, নোবেল নিজেকে বাঁচাতে ঘটনার পরপরই নিজের ব্যবহৃত গাড়িটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে ফেলেন। পাশাপাশি দুর্গন্ধ দুর করতে ছিটায় ব্লিচিং পাউডার।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল স্বীকার করেছেন, মূলত স্ত্রী হত্যার দায় এড়াতে তিনি নিজেই বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। অভিনেত্রী শিমুকে পাওয়া যাচ্ছে না সেজন্য স্বজনদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে লোক দেখানো খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই এমনটি সন্দেহ করছিলাম। সেভাবে তদন্ত করি এবং একপর্যায়ে একটি সুতার সূত্র ধরেই মূলত খুনিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পারিবারিক কারণে শিমুকে খুন করেন নোবেল।’
এদিকে প্রয়াত এ অভিনেত্রীর বোন ফাতেমা বলেন, স্বামী-সন্তানকে নিয়ে শিমু গ্রিন রোডের একটি বাসায় থাকতেন। বিভিন্ন সময় স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন কিংবা পারিবারিক অশান্তির কথা বলে আসছিল। কিন্তু সংসারের কথা ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আমি বোন হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এর আগে সোমবার শিমুর মরদেহ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে নোবেল ও ফরহাদকে আসামি করে মামলা করেন।
উল্লেখ্য, সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় তার অভিষেক হয়। এরপর ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।