চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় বিস্ফোরণের ঘটনায় রবিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ নিহত ১৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের আঙুলের ছাপের মাধ্যমে এসব লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
তাছাড়া কারো কারো মরদেহ আবার এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে, তা শনাক্ত করার উপায় নেই। যাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তারা হলেন: কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মনিরুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিস সদস্য নোয়াখালীর চাটখিলের মো. আলাউদ্দিন (৩৫), ভোলার দক্ষিণ বালিয়ারার হাবিবুর রহমান।
শনাক্তদের মধ্যে আরো আছে বাঁশখালীর রবিউল আলম, মোমিনুল হক, মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীর মো. সুমন, যশোরের ইব্রাহীম হোসেন, রানা মিয়া, নিপুণ চাকমা, শাকিল তরফদার, আফজাল হোসেন, ফারুক জমাদ্দার, হারুন উর রশিদ, শাহাদাত হোসেন, শাহাদাত উল্লাহ জমাদার ও নয়ন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় দগ্ধ আরও দুই শতাধিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। যার ফলে সেখানে থাকা ক্যামিক্যালের প্রভাবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে এসময় প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার ছিল।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কেঁপে ওঠে, আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে।
সবশেষ খবর অনুযায়ী আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট কাজ করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর টিম কাজ করছেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০ ঘণ্টা পার হলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। এখনো ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে এলাকা। ঘটনাস্থলের আশপাশে আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকায়, আর প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। তাদের সঙ্গে আছে মিলিটারি পুলিশ।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে এ দল কাজ করছে। আর বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দিতে কাজ করে চলেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
জেএন/টিটি