একশো বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপি হয়েছে রাশিয়া। অর্থাৎ শত বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম বিদেশি ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। আর তাই বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটির ঋণ খেলাপি হওয়াকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে সোমবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, রোববার রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পার হয়ে যায় এবং এতে করে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণে খেলাপি হয়েছে মস্কো।
বিবিসি বলছে, রোববারের মধ্যে রাশিয়াকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। রাশিয়ার হাতে এই অর্থ রয়েছে এবং নিয়ম মেনে যথা সময়েই বিপুল এই অর্থ পরিশোধে করতে দেশটি রাজিও ছিল। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ মস্কোর জন্য কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।
ক্রেমলিন অবশ্য ঋণ খেলাপি হওয়া এড়াতে সংকল্পবদ্ধ ছিল। কারণ এটি একটি দেশের মর্যাদার জন্য বড় ধরনের আঘাত। অন্যদিকে রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী উদ্ভূত এই পরিস্থিতিকে ‘প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষবার ১৯১৮ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খেলাপি হয়েছিল রাশিয়া। বলশেভিক বিপ্লবের সময় তৎকালীন নতুন কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির লেনিন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছিলেন।
এছাড়া ১৯৯৮ সালে যেকোনো ধরনের ঋণে শেষবার খেলাপি হয়েছিল মস্কো। মূলত বরিস ইয়েলৎসিনের শাসনামলের শেষের দিকে বিশৃঙ্খল সময়ে রুবেল সংকটের কারণে খেলাপি হয়েছিল রাশিয়া। সেই সময়ে মস্কো তার অভ্যন্তরীণ বন্ডগুলোতে অর্থপ্রদান করতে ব্যর্থ হলেও রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিশোধ নির্ধারিত সময়েই করেছিল।
অবশ্য ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে রাশিয়ার ঋণ খেলাপি হওয়াটি অনিবার্য বলেই মনে হয়েছিল। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্কগুলোতে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আর এর ফলে রাশিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়াও কার্যত থমকে গেছে।
রাশিয়ার সরকার বলছে, মস্কোর সকল ঋণ তারা সময়মতো পরিশোধ করতে চায় এবং এখন পর্যন্ত এই কাজে তারা সফল হয়েছে। রাশিয়ার প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ ডলার বা ইউরোতে ধার্য রয়েছে এবং বিপুল এই ঋণের প্রায় অর্ধেকই দেশের বাইরে রাখা হয়েছে।
জেএন/এমআর